শনিবার, ২৯ জুন, ২০১৩

বুদ্ধিমান দাঁত

     আকাশে এখনো সূর্য রয়েছে।সন্ধ্যা হতে ঢের দেরী। তবু আজ ওদের খেলা তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল। সব মিলিয়ে এক ঘন্টাও খেললনা ওরা।
     'কি-রে আজ পটলা, রাজু, হোদল-র খবর কি? খেলতে এলনা কেন? ওদের ছাড়া আজ খেলাটা জমল না।', খেলা শেষে মাঠে বসে  বলল টিটু।
     'কি জানি? সূর্য আজ পশ্চিম দিক দিয়ে উঠেছে মনে হয়। রাজু খেলতে এলনা, ভাবা যায়!', বলল টিটু।
     'কাল তো বলাই-দার টিউসান-এ ওরা তিন জন-ই এসেছিল', বলল ভোম্বল।
     'এই তো সবে মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হল, এর-ই মধ্যে টিউসান! পারিস-ও বটে তোরা। তা, বলাই-দা মানে যিনি অঙ্ক করান তো। শুনেছি, ওনার ছাত্ররা জল খেতে চাইলে উনি ওনার মেয়ে-কে বলেন আধ গ্লাস জল এনে দিতে!', বলল গুগুল।
     'আধ গ্লাস', হো হো করে হেসে উঠলো ওরা।
     'লোক-টা রাম কিপ্টে', বলল  ভোম্বল, 'খাতা কারেক্ট করার সময়ও  স্টুডেন্টদের পেন ব্যবহার করে। নিজের পেনের কালি পর্যন্ত খরচ করতে চায় না।'
     'আচ্ছা ওদের মোবাইল-এ কল করেছিলি? আমি করেছিলাম, কিন্তু কেউ ধরল না।', টিটু বলল।
     'দাড়া আমি এখন আর-একবার করে দেখছি,' বলে হোদল-কে ফোন করল গুগুল।
      'কি-রে আজ এলিনা কেন? .........সেকি! কি করে?..........আমাদের-কে বাদ দিয়ে দিলি!.......... বেশ হয়েছে ..........কবে আসবি আবার ............ ওকে, বাই .....', ফোনে এই কথা গুলো বলল গুগুল।
     'কি হয়েছে?', গুগুল ফোন রাখতেই জানতে চাইল টিটু।
     'শালাগুলো কাল টিউসানির পর খেতে গেছিল। হোদলের থেকে জোর করে কোল্ড-ড্রিঙ্কস আর প্যাটিস আদায় করেছিল', বলল গুগুল।
     'আমাকে ডাকল না তো', মুখ কালো করে বলল ভোম্বল।
     'তুই কাদিস পরে, আগে আমাকে কথাটা শেষ করতে দে', বলল গুগুল, 'প্যাটিস-গুলো বোধহয় ভালো ছিল না। ওই তিন-জনের-ই food poisoning হয়ে গেছে।'
     'বেশ হয়েছে, আমাদের না দিয়ে খেলে এটাই হবে', বলল হোদল, 'তা ওরা আবার কবে খেলতে আসবে?'
     'বমি-টা বন্ধ হয়েছে। তবে লুস-মোশন চলছে। 'লুস' টাইট হলে তবেই ওরা আসবে। আরো এক-দুই দিন লাগবে বোধ হয়', বলল গুগুল।
     'আমাদের বাড়িতে কাল এই নিয়ে আলোচলা হচ্ছিল। আমাদের এক আত্মীয়ও food poisoning-র জন্য হাসপাতালে ভর্তি', বলল ভোম্বল। 
     'আমাদের দেশ-এ ফুড ইন্সপেক্টর-রা এত ফাকিবাজ আর ঘুষখোর হয়। কেউ নিজের কাজ ঠিক করে করে না', বলল টিটু।
     'ফুড ইনস্পেকশন কিন্তু সব সময় কাজ করে না। মনে নেই, ২০১১-তে জার্মানি-তে কত লোক E-Coli ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে মারা গেছিল। শাকসব্জির মধ্যে দিয়ে এই ব্যাকটেরিয়া মানুষের শরীরে প্রবেশ করেছিল। ওদের দেশ-এ কিন্তু ফুড inspection বেশ ভালো ভাবে হয়। তবু-ও  ওরা এটা আটকাতে পারেনি', বলল গুগুল।
     'কাল, আলোচলার সময় বুড়ো-দা একটা নতুন আবিষ্কারের কথা বলল যা food  poisoning আটকাতে সাহায্য করতে পারে', বলল ভোম্বল।
    ' বুড়ো-দা মানে তোর জ্যাঠতুতো দাদা তো, যে USA-তে PhD করে। সে এখন এখানে?', জানতে চাইল গুগুল।
    'হ্যা, পরশু দিন বুড়ো-দা এসেছে,' বলল ভোম্বল।
    'তা একদিন আমাদের সাথে আলাপ করিয়ে দে', বলল টিটু।
    'হ্যা, মা বলছিল তোদের একদিন নেমত্তন্ন করবে,' বলল ভোম্বল।
    'দারুন ব্যাপার তো। এবার বল, তোর বুড়ো-দা কি বলল?', বলল টিটু।
    'বুড়ো-দা বলল যে USA-র Princton এবং Tufts ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এক রকম বুদ্ধিমান দাঁত আবিষ্কার করেছেন, যেটা বলে দেবে যে মুখের মধ্যের খাবার-এ কোনো হানিকারক ব্যাকটেরিয়া আছে কিনা?', বলে থামল ভোম্বল। দেখল সবাই হাঁ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
   'বুদ্ধিমান দাঁত! একমিনিট সময় দে ব্যাপারটা একটু হজম করে নি', বলল টিটু।
   'আর একটু খুলে বল, এটা কি ভাবে কাজ করে? এটা কি কোন কৃত্রিম দাঁত?', জানতে চাইল গুগুল।
   'না, কৃত্রিম নয়। আসল দাঁত। গ্রাফেন - নামের একটি  পদার্থ দিয়ে ওনারা দাঁত-র উপর একটা ট্যাটু বানান। সেই ট্যাটু মুখের মুধ্যে কোনো ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি ধরতে পারে', বলল ভোম্বল।


                                                                             সোর্স :  http://assets.nydailynews.com/polopoly_fs/1.1079703!/img/httpImage/image.jpg_gen/derivatives/landscape_635/image.jpg

   'গ্রাফেন কি?', জানতে চাইল টিটু।
  'সহজ ভাবে বললে এটা one-atom thick  layer of Graphite', বলল ভোম্বল
  'one atom thick বানায় কি ভাবে? এতো কল্পনা করাই মুশকিল!' বলল টিটু।
  'nanotechnology-তে এরকম নাকি বানানো যায় এখন', বলল ভোম্বল।
  'আচ্ছা, ওই ট্যাটু কোন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির কথা মানুষ-দের জানায় কি ভাবে? ওই ট্যাটুর মধ্যের খবর জানার জন্য কি কোনো wire ওই  ট্যাটুর সাথে লাগাতে হবে?', জানতে চাইল গুগুল।
 'না না, ওই ট্যাটু-র মধ্যে ছোট একটা antenna আছে।  antenna-টা গ্রাফেনের সাথে যুক্ত থাকে। কিন্তু ওই ট্যাটু-র মধ্যেকোন battery নেই। একটা receiver যন্ত্র  wireless communication-র মাধ্যমে ওই ট্যাটু-র সাথে যোগাযোগ করে এবং ওই ট্যাটু-র  মধ্যে জমা তথ্য সংগ্রহ করে।  রোগীর মুখে কোন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এলে ওই receiver যন্ত্রে সেটা ফুটে ওঠে। কোন wire ব্যবহার  না ব্যবহার করেই ডাক্তার বা রোগী নিজে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির কথা জানতে পারে। এর ফলে, ডাক্তার-রা কোন অসুখ শুরুতেই ধরতে বা চিকিত্সা করতে পারবে আর রোগীরাও অসুখ সম্পর্কে সাবধান হয়ে যাবে। ', বলল ভোম্বল।
    'ওনারা এটা কি মানুষের উপর পরীক্ষা করেছেন?' বলল গুগুল।
    'ওনারা এই ট্যাটু গরুর দাঁতে লাগিয়ে তার উপর মানুষের মুখের ভেতরের হওয়া ছেড়ে দেখেছেন যে ওই ট্যাটু ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি ধরতে পেরেছে। গরুর দাঁত ব্যবহার করেছেন কারণ মানুষের দাঁতের পক্ষে ওই ট্যাটু একটু বড়। তবে ওনারা এরপর মানুষের দাঁতের মত করে ওই  ট্যাটু বানাবেন', বলল ভোম্বল।
     'ওই ট্যাটু কোন কোন ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি ধরতে পারে?', জানতে চাইল টিটু।
    'গবেষকরা এখনো পর্যন্ত  কিছু stomach ulcers and some cancer-র সাথে যুক্ত ব্যাকটেরিয়া সনাক্ত করতে পেরেছেন। যদিও আরো গবেষণার দরকার আছে', বলল ভোম্বল।
    'আচ্ছা, খাবার খেলে বা ব্রাশ-করলে ওই ট্যাটু-টা উঠে আসবে না তো?', জানতে চাইল গুগুল।
    'হ্যা, এটা খুব দরকারী বিষয়। এই মুহুর্তে, ওই ট্যাটু খুব স্থায়ী নয়। তবে গবেষকরা এটাকে আরো স্থায়ী করার চেষ্টা করছেন যাতে দাঁত মাজলে বা খাবার খেলে এটা দাঁত ছেড়ে বেরিয়ে না আসে', বলল ভোম্বল।
    'বুদ্ধিমান দাঁত-ই বটে! হাই-ফাই আবিষ্কার কিন্তু!', বলল গুগুল। সবাই মাথা নেড়ে তাতে সায় দিল।
     'ও! একটা হেব্বি রসালো খবর আছে। আমি ভুলেই গেছিলাম বলতে', বলে উঠল গুগুল।
     বিকেল প্রায় শেষ হতে চলল। ওরা এবার অন্য বিষয়ে আলোচলা করতে সুরু করল। তবে আমাদের তাতে আগ্রহ নেই, কি বল তোমরা?

২টি মন্তব্য: