রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৩

Gene থেকে ছবি আঁকা যায়/ সেকি ভাবা যায়!

"একটু নড়লেই গুলি মাথা ফুঁড়ে বেরিয়ে যাবে", বলল গামছায় মুখ ঢাকা লোকটা। ভোম্বলের মাথায় ঠেকানো বন্দুকের নল। ভয়ে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম।
"কি চাই, ওকে ছেড়ে দাও ওর জ্বর হয়েছে", সামনে দাড়ানো ভোম্বলের মা  অসহায়ের মত বলে উঠল। 
"বাড়িতে সোনা-দানা, টাকা যা আছে দিয়ে দে, কোনো বেচাল দেখলেই গুলি চলবে",  বলল এক ডাকাত।
"বাড়িতে ১০ লক্ষ টাকা আছে আমরা জানি। সব চাই', বলে উঠল আর-এক ডাকাত।
দশমীর রাত। রাত ন'টা। পাড়ার সবাই ভাসানে গেছে।  বাড়িতে শুধু  মা আর ভোম্বল। এই ফাঁকে ছাদের দরজা ভেঙ্গে ঢুকে পড়ে চার ডাকাত। 

এর ১ মাস পরের এক পড়ন্ত বিকেল। মাঠে গোল হয়ে বসে রাজু, পটলা, গুগুল, হোদল, টিটু। ভোম্বল আজও আসেনি।
"ভোম্বলের সাথে কথা হলো?", জানতে চাইল পটলা।
"ও এখনও মোবাইল তুলছে না", বলল রাজু।
"মামা বাড়ি থেকে ফিরেছে?", জানতে চাইল টিটু।
"না-রে", বলল রাজু।
"বেচারা খুব ভয় পেয়ে রয়েছে", বলল হোদল।
"লাইফের প্রথম ডাকাতির অভিজ্ঞতা বলে কথা!", বলল গুগুল।
"ডাকাতদেরও বলিহারি, আর কাউকে পেল না, শেষে  কি না ভোম্বল!!", বলল হোদল।
"হ্যা, ডাকাতদের বলে দেব পরের বার তোদের বাড়িতে যেতে, তোর বাবা প্রচুর পয়সা করেছে", বলল পটলা।
"ইসস, একটা যদি ছবি পেতাম রে  ....... কপালে বন্দুক ঠেকানো ভোম্বল  .... ফেসবুকে আমার প্রোফাইল পিকচার করে দিতাম রে", হতাস মুখে বলল পটলা।
"ওই ছবি দেখে মেয়েদের লাইন পরে যেত ভোম্বলের জন্য", হাসতে হাসতে বলল গুগুল।
"আচ্ছা পুলিস কোনোও কিনারা করতে পারল?",  জানতে চাইল হোদল।
"না-রে",  বলল রাজু।
"তোদের পুলিস ডাকাত ধরেছে আর-কি! ঘুষ খাওয়ার থেকে অবসর পেলে তবে তো ধরবে!", বলল টিটু।
"শুরু হয়ে গেল, টিটু-বাবুর ভারতবর্ষ-নিপাত-যাক!", বলল পটলা।
"পুলিস ধরতে পারছে না কেন?",  জানতে চাইল রাজু।
"আমার মনে হয় আশেপাশের কোনো লোক ইনভলভ ছিল। তা না হলে, ডাকাতরা জানলো কি করে যে ওই দিন ভোম্বলদের ঘরে অত টাকা ছিল!", বলল গুগুল।
"ঠিক ঠিক", বলল পটলা।
"আসলে সব চেয়ে বড় সমস্যা হলো যে, চার ডাকাতের সবার মুখ গামছা দিয়ে ঢাকা ছিল। তাই ডাকাতদের কোনো ছবি আঁকা যায় নি ",  বলল রাজু।
"তাহলে?", বলল টিটু।
"একটা ক্লু আছে। এক ডাকাতের রক্ত। ছাদের দরজা ভাঙ্গার সময় এক ডাকাতের গা থেকে বেশ ক-এক ফোটা রক্ত মাটিতে পড়ে। ", বলল রাজু।
"তাহলে তো এক ডাকাতের Gene পাওয়া গেছে", বলল গুগুল।
"কিন্তু মুশকিল হলো যে ওই Gene পুলিসের ডাটাবেস-এ থাকা ডাকাতদের সাথে মেলে নি। সন্দেহজনক কিছু লোকের সাথেও মেলে নি। আর কেউ বাকি নেই মেলানোর মত।", বলল রাজু।
"তালে?",  জানতে চাইল হোদল।
"তালে আর কি! কিছু না, ফাইল বন্ধ", বলল পটলা।
"এখনকার ফরেনসিক সাইন্স-র সীমাব্ধতা হলো যে Gene থেকে অপরাধীর ছবি আঁকা যায় না। পুলিশ-কে এখনো প্রত্যক্ষদর্শী-র বর্ণনা অনুযায়ী ছবি আঁকাতে হয়। সেই ছবি দেখে অপরাধীকে চেনা অনেক ক্ষেত্রেই অসম্ভব হয়। ", বলল হোদল।
"হ্যা, পুলিসের চিত্রকরের আঁকা সেই সব অপরাধীর ছবির সাথে আমাদের অঙ্কের teacher শশীবাবুর খুব মিল পাই", বলল গুগুল। 
হো -হো করে হেসে উঠলো সবাই। 
"জানিস তো কিছু দিন আগে কাগজে পড়েছিলাম যে কিছু বিজ্ঞানী Gene থেকে মানুষের মুখের ছবি আঁকার চেষ্টা করছে", বলল হোদল।
"ব্যাপারটা  একটু খুলে বল তো", বলল পটলা।
"এই দেখ, আমরা কেমন দেখতে হব সেটা তো আমাদের জিন-র উপর নির্ভর করে। লম্বা হব না বেঁটে, গায়ের রং কি হবে, চোখের মণির  রং কি হবে, শরীরের গঠন কি হবে সব Gene-র উপর নির্ভর করে। মা-বাবার মুখের গঠনের সাথে ছেলে, মেয়ের  মুখের মিল থাকে। এখন আমরা যদি মানুষের মুখের গঠনের জন্য দায়ী Gene-র হদিস পাই তবে সেই Gene ব্যবহার করে মুখের ছবি আঁকা যে পারে।", বলল হোদল।
"তাই তো! মনে পড়ছে Tom Cruise-র সিনেমা-য় এরম ছিল। কিন্তু, বাস্তবে এও কি সম্ভব! ", বলল পটলা।
"কেউ কি এই কাজে সাফল্য পেয়েছে?", জানতে চাইল গুগুল।
"কিছুটা। নেদারল্যান্ড-এর Erasmus University Medical Center-র বিজ্ঞানী Dr. Manfred Kayser মানুষের মুখের গঠনের পিছনে দায়ী পাঁচ-টা Gene সনাক্ত করতে পেরেছেন। Dr. Manfred Kayser এবং ওনার সহযোগী বিজ্ঞানীরা প্রথমে MRI-র (Magnetic Resonance Imaging) মাধ্যমে ৫৩৮৮ জন European বংশোদ্ভুতোর মুখ scan করেন। ওনারা মূলত মুখের উপরের অংশের (নাক পর্যন্ত) scan  করেন। ওই scan থেকে, ওনারা মানুষের মুখের ৪৮ টা  চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করেন। তারপর,  ৫৩৮৮ জন Volunteer-এর Gene-র সাথে ওই  ৪৮ টা  চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যর সম্পর্ক খোজার চেষ্টা করেন। এই পদ্ধতিতে ওনারা ৫ টা Gene খুঁজে পান যা মানুষের মুখের উপরের অংশের গঠনের যাও দায়ী।", বলল হোদল।
"ওই Gene গুলো মুখের সব বৈশিষ্ট্যর জন্য দায়ী?", জানতে চাইল রাজু।
"না। এই ৫ টা Gene মুখের উপরের অংশের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য ঠিক করে। বিজ্ঞানীরা সন্দেহ করেন যে এছাড়াও আরো শত বা হাজার Gene রয়েছে যা মুখের ছোটো ছোটো বিশেষত্বর জন্য দায়ী। এজন্য Dr. Manfred Kayser এবং ওনার সহযোগী বিজ্ঞানীরা আরো গবেষণা চালাচ্ছেন।", বলল হোদল।
"আচ্ছা, ওনারা তো শুধু  European বংশোদ্ভুতোদের উপর পরীক্ষা করেছিলেন। হতে তো পারে যে , Asian-দের ক্ষেত্রে অন্য Gene দায়ী!", বলল  টিটু।
"এ বিষয়ে ওনারা আরো গবেষণা করছেন। তবে, আমরা সবাই তো মানুষ, তাই খুব কিছু আলাদা হওয়ার chance কম।", বলল হোদল।
"আচ্ছা, চুল বা চোখের মণির রঙের পিছনে কি এই ৫ টা Gene দায়ী?", বলল গুগুল।
"না, চুল বা চোখের মণির রঙের পিছনে অন্য Gene রয়েছে যার মধ্যে ১১ টি Dr. Kayser সনাক্ত করতে পেরেছেন। চুলের রঙের ক্ষেত্রে ওনারা ৮০ শতাংশের বেশী সাফল্য পেয়েছেন।", বলল হোদল।
"আর কতটা নিখুত মুখের ছবি আকতে পেরেছেন ওনারা ওই পাচটা Gene-র সাহায্যে?", জানতে চাইল পটলা।
" Dr. Kayser এখনো পুরো মুখের ছবি আঁকেননি কারণ মুখের নিচের অংশের Gene-র সনাক্তকরণ এখনো বাকি আছে। এই ৫ টা Gene মুখের উপরের অংশের বৈশিষ্ট্য ঠিক করে", বলল হোদল।
"জানিস তো, আর একজন রয়েছে যিনি জিন থেকে মানুষের মুখের ছবি একেছেন ", মোবাইলে Search করতে করতে বলল গুগুল।
"তাই! জানিনা তো! কে তিনি?", জানতে চাইল হোদল।
"আমেরিকার Rensselaer Polytechnic Institute-এ Heather Dewey-Hagborg নামক এক PhD স্টুডেন্ট এই বিষয়ে গবেষণা করছেন। ওনার পিএইচডি বিষয় হলো ইলেকট্রনিক আর্ট। উনি রাস্তায় পরে থাকা মানুষের চুল নিয়ে তার থেকে মানুষের মুখের ছবি আঁকার চেষ্টা করেন। প্রথমে, চুল থেকে এমন DNA বার করেন যা মানুষের চেহারার জন্য দায়ী হতে পারে। তারপর সেই Genetic information ব্যবহার করে উনি মুখের একটা 3-D আদল তৈরী করেন। এরপর 3-D প্রিন্টার ব্যবহার ওই মুখের একটা আসল প্রতিরূপ বা model বানান। Heather Dewey-Hagborg মানুষের চেহারার ৫০ টি বৈশিষ্ট চিহ্নিত করে সেগুলো পুর্ননির্মাণ করার চেষ্টা করছেন।",  বলল গুগুল।
"oh, তালে তো Heather Dewey-Hagborg Dr. Kayser-র থেকে অনেক বেশি সফল!", বলল হোদল।
"কিছুটা বলা যেতে পারে। তবে, Heather Dewey-Hagborg মুখের আকৃতির অনেক বৈশিষ্ট এখনো Gene থেকে বানাতে পারেনেনি।", বলল গুগুল।
"আচ্ছা, Heather Dewey-Hagborg-র বানানো মুখের কোনো ছবি internet-এ আছে? থাকলে দেখা না!", আগ্রহ নিয়ে বলল হোদল।
"হ্যা, Heather Dewey-Hagborg নিজের Gene থেকে নিজের একটা ছবি বানিয়েছেন, এই দেখ", বলে নিচের ছবি দেখালো  গুগুল।


                                 সোর্স: http://i.bnet.com/blogs/heather-dewey-hagborg-ted-scrn.jpg

"বানানো মডেল-টা  কিন্তু হুবহু ওনার মত দেখতে নয়", বলল রাজু।
"তা ঠিক। তবে বলা যেতে পারে ওনার বোন বা পরিবারের ওন্য কারোর মত', বললপটলা।
"হ্যা, আমারও তাই মনে হচ্ছে", বলল টিটু।
"এই ছবি দেখে বোঝা যাচ্ছে, আরো গবেষণা করলে কিন্তু Gene থেকে ছবি আঁকা সম্ভব হবে", বলল হোদল।
"এই দাড়া, ভোম্বল-কে  একটা SMS পাঠিয়ে বলি যে ওদের ডাকাত ধরা পড়বে খুব তাড়াতাড়ি  .. ২০-৩০ বছর পর.. হয়তো!", বলল পটলা। 

সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৩

তেল নয়, জলে চলে গাড়ী / এ-কি বাড়াবাড়ি!

অষ্টমীর সকাল।
পাড়়ার পুজো মন্ডপে বসে গল্প করছে রাজু, ভোম্বল, গুগুল, হোদল, পটলা, টিটু। অঞ্জলি দেওয়া হয়ে গেছে ওদের।
"যাই বল ভাই, পুজোর এই কটা দিনের মজাই আলাদা" বলল হোদল
"যা বলেছিস, স্বাধীনতা কাকে বলে এই ক-দিনেই শুধু বোঝা যায়। টিউসান, মা-বাবা-র শাসন থেকে মুক্তি।" বলল ভোম্বল।
"যত খুশি রোল, মোগলাই, চিপস, কোল-ড্রিঙ্কস  খাও। .. কেউ কিছু বলার নেই। " বলল পটলা।
"এই যে 'স্বাধীনতা-জিন্দাবাদ'-রা, বলি আজকের প্লান কি?", বিরক্ত মুখে জানতে চাইল টিটু।
"প্লান? ....... ভাবিনি তো কিছু ", বলল রাজু।
"এখন তো আড্ডা। ... তারপর ..... দুপুরে পাড়়ায় খাওয়া-দাওয়া .........  আসছিস-তো?", জানতে চাইল গুগুল।
"হ্যা, আসব-না মানে! পাড়়ার সবাই মিলে বসে খাওয়ার মজাই আলাদা।", বলল পটলা।
"মেনু কি ?", জানতে চাইল হোদল।
"শুনলাম, ফ্রাইড রাইস, খিচুড়ী, বেগুনি , আলু ভাজা, পাপড়, প্লাস্টিক চাটনি, জিলিপি, রসগোল্লা", বলল গুগুল।
"থাম, থাম ... জিভে জল চলে এল যে!", বলল ভোম্বল।
"খিদে-টা কেমন বেড়ে গেল না। এই হোদল, খাস্তা কচুরি নিয়ে আয়।", বলল পটলা
"তোর বাবা-কে বল নিয়ে আসতে।", খেপে গিয়ে বলল হোদল।
"আমি আজ দুপুরে খেতে যাচ্ছি না।", হটাত বলে উঠলো ভোম্বল।
"কেন? কি হলো!", বাকিরা অবাক হয়ে জানতে চাইল।
"আমি কোনো বার বেগুনি পাই না। প্রতিবার গুগুল আমার পাশে বসে আর আমার বেগুনি-গুলো খেয়ে নেয়। এই বছর নিলে, হ্যাট-ট্রিক হবে। ",  কাচুমাচু মুখ করে বলল ভোম্বল।
"আরে। .. তালে তো এবার তোর পাপড় আর জিলিপি খেয়ে আমরা হ্যাট-ট্রিক সেলিব্রেট করব। ..... মোটু..... তোর পাশে না বসলে আমার পেট ভরবে না!", বলল গুগুল
"আচ্ছা, দুপুর তো হল, বিকেল আর রাত-এ কি করা যায়?", জানতে চাইল টিটু।
"কলকাতা-য় ঠাকুর দেখতে  যাবি?  আমরা কোনো দিন বন্ধুরা মিলে যাই নি।", বলল গুগুল।
সবাই চুপ।
"দারুন আইডিয়া! "
"চ, সাউথ-টা ঘুরে আসি। "
"কিন্তু যাবি কি ভাবে?"
"হোদলদের গাড়ি তো রয়েছে "
"চাপ আছে! বাবা গাড়ি ব্যবহার করা কমিয়ে দিয়েছে। আমাকে দেবে বলে মনে হয় না। "
"কেন?"
"আরে, পেট্রলের দাম বেড়ে গেছে না।  .... "
"তালে বাস-এ করে চল।"
"তাতেও চাপ আছে  ....  পেট্রলের দাম না বাড়াতে রাস্তায় বাস খুব কমে গেছে .... আর তাই বাসে প্রচন্ড ভিড় হচ্ছে। ... মারামারি করে ঠাকুর দেখায় কোনো অনন্দ নেই।"
"হোদল, এক বার তোর বাবাকে বলেই দেখ না। "
"ok boss", বলল হোদল।

"বাবা না বলল", বলল হোদল।

"তালে ? যাওয়া হবে না!"
"এই শালা পেট্রল-ই সব কিছুর মূলে!"
"পেট্রলের দাম খুব বাড়ছে এটাও ঠিক।"
"বিদেশে তো এখন ইলেকট্রিক-এ চলে এমন গাড়ি আবিষ্কার হয়েছে।"
"সে তো আরো বিপদ। এমনিতেই কারেন্ট থাকে না, এর উপর গাড়ি কারেন্ট-এ চললে আরো লোডশেডিং হবে। তাছাড়া, তখন বিদ্যুতের দাম বাড়বে, ব্যাপারটা সেই হরে-দরে এক-ই।"
"তালে , এখন কি করা যায়?"
"এই রাজু তুই স্পন্সর কর। বেশী  না, ১০ লিটার তেল কিনে দে।"
"১০ লিটার জলের জার কিনে দিচ্ছি, চলবে!"
"Bingo!  ভেবে দেখ গাড়ি যদি জলে চলত তালে কেমন হত!", বলে উঠলো ভোম্বল।
"ব্যাপক হত, জলের যোগান তো অফুরন্ত।তাছাড়া পরিবেশ দূষণ-এর ভয়-ও নেই।", বলল রাজু।
"এই গুগুল দেখ না, এরম কিছু হয় কিনা?", বলল পটলা।
"এক মিনিট!", বলল গুগুল।
"সত্যি boss ..... এরকম গাড়ি বানানোর চেষ্টা বহু দিন ধরে চলছে। ৯০-র দশকে স্ট্যানলি মেয়ার নামক এক মার্কিন বিজ্ঞানী জল দিয়ে গাড়ি চালানোর সাফল্য দাবি করেন।", বলল গুগুল।
"উনি জল-কে কি ভাবে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করেন? এর অপারেটিং প্রিন্সিপল-টা কি? ", বলল পটলা।
"জল হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন দিয়ে তৈরি। হাইড্রোজেন একটা অত্যন্ত দাহ্য পদার্থ, যা অক্সিজেন-র সংস্পর্শে এলে জ্বলে ওঠে এবং শক্তি বার করে। স্ট্যানলি মেয়ার এমন একটা Fuel Cell বানান  যেটা প্রথমে জল-কে ভেঙ্গে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন  তৈরী করে এবং তারপর হাইড্রোজেন-কে পুড়িয়ে শক্তি উত্পন্ন করে সেটা দিয়ে গাড়ি চালান।",  বলল গুগুল।
"কিন্তু জল ভেঙ্গে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন তৈরি তো নতুন কিছু নয়। একেই তো electrolysis বলে। ",  বলল টিটু।
"একদম ঠিক। Normally, জল ভেঙ্গে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন তৈরি করতে অনেক বেশী শক্তি লাগে। কিন্তু, স্ট্যানলি মেয়ার দাবি করেন যে ওনার আবিষ্কৃত পদ্ধতিতে অনেক কম শক্তি ব্যবহার করে জলে থেকে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন তৈরি করা যায়। তারপর সেই  হাইড্রোজেন-কে বার্ন করে অনেক বেশি শক্তি  পাওয়া যায়। ওনার আবিষ্কারের মূল negative সাইড ছিল যে সেটা প্রচলিত Law of Thermmodynamics-র বিরোধী ছিল।", বলল গুগুল।
"তারপর কি হল?", জানতে চাইল রাজু।
"উনি ওনার আবিষ্কারের অনেক পেটেন্ট-ও নেন। অনেক তেল কোম্পানি ওনার থেকে পেটেন্ট কিনে নিতে চায়, কিন্তু উনি রাজি হননি। ওনার সন্দেহ ছিল যে তেল কোম্পানি ওনার পেটেন্ট কিনে ওনার আবিষ্কার চেপে দেবে। ওনার সন্দেহ খুব ভুল ছিল না। ১৯৯৬ সালে এক Ohio Court স্ট্যানলি মেয়ার-র আবিষ্কারকে জালিয়াতি বলে ঘোষণা করে। এরপর ১৯৯৮ সালে দুই বেলজিয়ান investor-এর সাথে resturant -এ খাওয়ার সময় হটাত করে উনি মারা যান। সম্ভবত ওনাকে বিষ দিয়ে মেরে ফেলা হয়। মনে করা হয়, তেল কোম্পানিগুলো এর পিছনে ছিল।", বলল গুগুল।

                                                            (Youtube থেকে নেওয়া)


"স্ট্যানলি মেয়ার-এর মৃত্যুর পর এই আবিষ্কার-র উপর পর্দা পরে যায়।  কিন্তু, গ্লোবাল ওয়ার্মিং-র জন্য আবার এই বিষয় নিয়ে আগ্রহ তৈরী হয়েছে।", বলল গুগুল।
"Recently, কারা কারা এটা নিয়ে কাজ করছে?", বলল হোদল।
"Genepax নামের এক জাপানি কোম্পানি এমন একটা গাড়ি আবিষ্কারের দাবি করেছে যেটা জলে চলে। এদের গাড়ি ১ লিটার জলে ৫০ মাইল যায়। এছাড়া আরো অনেকে এই রকম গাড়ি আবিষ্কারের কথা দাবি করেছে। এছাড়া ২০০৭ সালে, জন কান্জিউস একটা উল্লেখযোগ্য  দাবি করেন। উনি লবনাক্ত জলে আগুন জ্বালানোর সাফল্য দাবি জানান। ", বলল গুগুল।

                                                                (Youtube থেকে নেওয়া)


"তালে, জল দিয়ে গাড়ি চলার ভবিষ্যত কি? এটা কি সম্ভভ?", , বলল পটলা।
"এট়া একটা বড় প্রশ্ন। একটা লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো যে, কোনো University-র গবেষকরা এই রকম গাড়ির আবিষ্কার-এর দাবি করেননি। জল দিয়ে গাড়ি চলার theory এখনো কোনো University-র গবেষক প্রমান করতে পারেনি। ২০০৭ সালে Nature পত্রিকার এক কলাম-এ Philip Ball লেখেন যে জল দিয়ে গাড়ি চালানো অসম্ভব কারণ জল হল spent fuel যা hydrogen পুড়িয়ে পাওয়া যায়। জল জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে গেলে The first and second laws of thermodynamics-কে violate করতে হবে। ", বলল গুগুল।
"সব শুনে মনে হচ্ছে  জল দিয়ে গাড়ি চালানো এখনকার physics-এ অসম্ভব।", বলল হোদল।
"হ্যা, শুনতে ভালো লাগলেও জল দিয়ে গাড়ি চালানো কল্পনাই!", বলল পটলা।
"এতক্ষণ ধরে বকবক করে শেষে এই conclusion! তোরা পারিস-ও বটে!", বলল টিটু।
"এবার আসল কথায় আয়। কলকাতায় ঠাকুর দেখতে যাওয়া হচ্ছে?" বলল পটলা।
"আমার মাথায় একটা alternate প্লান এসেছে", বলল ভোম্বল। 
"কি?", চেচিয়ে উঠলো সবাই।