শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৪

১+২+৩+ ...... + (অসীম পর্যন্ত ) = - ১/১২

রাত ২ টো। কম্পিউটারে ফেসবুক খুলে বসে আছে ভোম্বল। বন্যা নাকি ফেসবুকে নতুন ছবি লাগিয়েছে। বন্যা ওদের পাড়ার নামকরা সুন্দরী। সারা সন্ধ্যা ধরে ও অপেক্ষা করছে  কখন ওই ছবিগুলো দেখবে!
ছবি গুলোর দিকে তাকিয়ে কখন যে রাত ২ টো বেজে গেছে খেয়াল-ও করেনি। হটাত্ করে একটা শব্দ শুনে হকচকিয়ে উঠলো ভোম্বল।
"মা এসেছে নাকি!" ভয়ে ভয়ে দরজার দিকে তাকালো ভোম্বল। "মা, জানতে পারলে কপালে দুঃখ আছে!"
না, দরজা তো বন্ধ-ই আছে!
তালে!
আওয়াজটা এলো কোথা থেকে! মোবাইল-তো বন্ধ। আবার চোর এলো নাকি! ভয়ে দম বন্ধ হয়ে এলো ওর।
আবার, আবার সেই আওয়াজ! কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করেছে।
প্রাণ-টা প্রায় বেরিয়েই আসবে; এই সময়, ফেসবুক-এ চোখ পড়ল ওর। "আরে! চ্যাটে message এসেছে! তাই এই আওয়াজ", ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল ভোম্বলের।
বুড়ো দা :- কি-রে এত রাতে ফেসবুকে  কি করছিস? দাড়া তোর হচ্ছে!
ভোম্বল :- না, না,  কিছু না। এমনি। এই বন্ধুদের ছবি দেখছি।
বুড়ো দা :-  সারাদিন-তো বন্ধুদের সাথেই থাকিস। ঠিক করে বল! কোনো বান্ধবী নয় তো!
ভোম্বল :- না না। আসলে কাল তো ক্লাস রবিবার তাই আজ একটু ফেসবুক খুলেছি।
বুড়ো দা :- হমমমমমমমমমম। তোর বন্ধুদের খবর কি?
ভোম্বল :-  সবাই বিন্দাসসস.......
বুড়ো দা :- তোদের আড্ডা-টা কিন্তু দারুন। এবার বাড়ি গেলে আবার আড্ডা মারা যাবে।
ভোম্বল :-  হ্যা নিশ্চয়ই। তুমি আজ ইউনিভার্সিটি যাওনি? তোমার PhD কেমন চলছে? USA-তে এখন  আবহাওয়া কেমন?
বুড়ো দা :- PhD চলছে এই একরকম। এখানে তো এখন বসন্ত পড়ছে। তোর পড়াশুনা কেমন চলছে? তোর ক্লাস ১১-র ফলাফল বেরিয়েছে না! এবারও কি দ্বিতীয়?
ভোম্বল :- না, এবার ওয়ার্ল্ড রেকর্ড হয়েছে! আমি প্রথম হয়েছি! আর প্রতীম দশম হয়েছে!!!!
বুড়ো দা :- সেকি!!!!!!!! অবিশ্বাস্য !!!!!!  এত গিনিস বুক-এ নাম ওঠার মত বিষয়।
ভোম্বল :- যা বলেছ! আমরা কেউ এখনো এই শক থেকে বেরোতে পারিনি যে প্রতীম দশম হয়েছে! ক্লাস ওয়ান থেকে প্রতি ক্লাসে প্রতীম প্রথম হয়ে আসছে। কারোর বাবা-র ক্ষমতা ছিল না যে ওকে প্রথম স্থান থেকে সরায়।
বুড়ো দা :- তালে তুই এই অসম্ভব-কে সম্ভব করলি কি ভাবে?
ভোম্বল :- আমার কোনও অবদান নেই। মাত্রাতিরিক্ত পড়াশুনা করার ফলে প্রতীম অসুস্থ হয়ে পড়েছিল।
বুড়ো দা :- ওর কি অসুখ হয়েছিল?
ভোম্বল :- ওর মাথায় গন্ডগোল দেখা দিয়েছিল। না ঘুমিয়ে দিনে একটানা ২০ ঘন্টা পড়লে এই হয়! ১১-এ ওঠার পর থেকে জয়েন্ট, IIT-র জন্য ও ক্রমশ পড়াশোনা বাড়িয়ে যাচ্ছিল। শেষ কয়েক মাস তো সীমা ছাড়িয়ে গেছিল।
বুড়ো দা :- ও এখন কেমন আছে?
ভোম্বল :- ডাক্তার দেখাচ্ছে। এখন একটু ভালো আছে। ডাক্তার ওকে একটা ওষুধ দিয়েছে। বলো তো কি?
বুড়ো দা :- কি?
ভোম্বল :- ডাক্তার প্রেসক্রিপশনে  লিখে দিয়েছে  'No পড়াশুনো" !!!!  ব্যাস আর কিছু না।
বুড়ো দা :- হি হি হি........... :) :) :) :) .................. আসলে কোনো কিছুই মাত্রাতিরিক্ত ভালো নয়। সীমা ছাড়িয়ে গেলে সব কিছুর-ই ফল খারাপ হয়। এটা প্রকৃতির নিয়ম।
ভোম্বল :- তা যা বলেছ।
বুড়ো দা :- জানিসতো, বিগত কিছু মাস ধরে একটা ফর্মূলা ইন্টারনেটে খুব ফুটেজ পাচ্ছে। আমার মনে হয় ওই ফর্মূলা দিয়ে এই ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করা যায়।
ভোম্বল :- কোন ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করা যায়??
বুড়ো দা :-এই যে কোনো কিছুই মাত্রাতিরিক্ত ভালো নয়! প্রতীমের খারাপ result করাটা!
ভোম্বল :- সেকি!!!!!!!!! ফাটাফাটি!!!!!!!! একটু খুলে বলোতো। মনে হচ্ছে রাত-টা জমে যাবে। ফর্মূলা-টা কি?
বুড়ো দা :- একটা infinite series-র যোগফল.....সেটা হলো .....
           
              ১+২+৩+৪+৫+ ...... + (অসীম পর্যন্ত )  = -১/১২  ;

ভোম্বল :- কিন্তু এই যোগফল-টার ভ্যালু infinite হওয়া উচিত না!!!!!!!!!!  নেগেটিভ হচ্ছে কি করে!!!!!! এটা কি ঠিক?
বুড়ো দা :- শুরু-তে হটাত মনে হবে অদ্ভূত। এই equation-কে অনেক গণিতজ্ঞ এখনও মন থেকে মানতে পারেননি। কিন্তু এই ফর্মূলা-টা সঠিক। Cambridge Monographs on Mathematical Physics-এর একটা বই-তে এই  ফর্মূলা (১+২+৩+৪+৫+ ...... + অসীম পর্যন্ত =  - ১/১২ ) সম্পর্কে বলা হয়েছে : "One of the most remarkable formulae in science is surely"
ভোম্বল :- ohhhhhhhhhhh ......আরো বিশদ ভাবে বলো। এটা কার আবিষ্কার? কোথা থেকে এলো এই ফর্মূলা?
বুড়ো দা :- শুনলে গর্ব বোধ করবি যে ভারতের এক বিখ্যাত গণিতজ্ঞ  শ্রী রামানুজনের প্রথম এই infinite summation-র কথা ওনার নোটবুকে উল্লেখ করেন। পরে এটা "An unpublished manuscript of Ramanujan on infinite series identities" নামক পেপার-এ বেরোয়।
ভোম্বল :- এই ফর্মূলা-র mathematics ব্যাকগ্রাউন্ড কি? মানে এটা কি ভাবে আসছে?
বুড়ো দা :- "রামানুজন Summation"-র মাধ্যমে এই infinite series summation-টা প্রমাণ করা যায়। এছাড়া,  "Zeta function regularization"-র মাধ্যমেও এই যোগফল-টা পাওয়া যায়। ১৯১৩ সালে Dr. G. H. Hardy-কে লেখা এক চিঠি-তে রামানুজন লেখেন যে:
"Dear Sir, … I told him that the sum of an infinite number of terms of the series: 1 + 2 + 3 + 4 + · · · = −1/12 under my theory. If I tell you this you will at once point out to me the lunatic asylum as my goal. ...…"

ভোম্বল :- কিন্তু এই ফর্মূলা-র কি কোনও বাস্তব ভিত্তি আছে?
বুড়ো দা :- এখানেই  রামানুজনের কৃত্তিত্ব। ওনার এই অদ্ভুত ফর্মুলা quantum field theory, স্ট্রিং theory -তে ব্যবহার হয়েছে।
ভোম্বল :-  একটা উদাহরণ দাও....
বুড়ো দা :- যেমন "Casimir effect" ...... ধর, দুটো un-charged ধাতব plate parallely রাখা হোলো। ... ক্লাসিকাল physics অনুযায়ী ওই ধাতব পাত দুটোর মধ্যে কোনো force কাজ করা উচিত নয়। কিন্তু, Casimir প্রথম এইরকম force-র অস্তিত্ব অনুমাণ করেন। পরে বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে পরীক্ষা করে এই Casimir  force-র অস্তিত্ব পান।
এখন, রামানুজানের ওই infinite series-র সাহায্যে one dimensional দুটো ধাতব পাতের মধ্যেকার Casimir  force-কে প্রকাশ করা যায়। এছাড়াও , রামানুজন summation ব্যবহার করে Casimir pressure-কে প্রকাশ করার সাফল্য  দাবি জানিয়েছেন অনেক বিজ্ঞানীরা।



                                                    Casimir Pressure



ভোম্বল :- বুঝলাম। এবার বলো যে, এই infinite series summation দিয়ে কি ভাবে প্রমান করা যায় যে কোনো কিছু মাত্রাতিরিক্ত ভালো নয়?
বুড়ো দা :- খুব সহজ। কেউ যদি ধর খুব পড়াশোনা করছে, পড়াশোনা  করার rate সময়ের সাথে ক্রমশ বাড়িয়ে যাচ্ছে। এখন, result-কে  যদি পড়াশোনা  করার rate-র একটা infinite summation (রামানুজানের ওই infinite series-র মত  ) হিসেবে প্রকাশ করি, তালে কি পাওয়া যায়?
ভোম্বল :- খুব পড়াশোনা করলেও ফলাফল negative হতে পারে। অর্থাৎ, পড়াশোনা  করার rate ক্রমশ বাড়িয়ে যেতে থাকলে এক সময় ফলাফল নেগেটিভ হবে।
বুড়ো দা :- ঠিক। আর এটাই হয়েছে প্রতীমের ক্ষেত্রে। মাত্রাতিরিক্ত পড়ার ফলে ওর result নেগেটিভের দিকে গেছে।
ভোম্বল :-  একদম ঠিক বলেছ। একরম ভাবে যে ব্যাখ্যা করা যায় কখনো ভেবে দেখিনি। এটা কি তোমার ব্যাখ্যা।
বুড়ো দা :- এটা সম্পূর্ণ আমার ব্যাখ্যা।
ভোম্বল :- আরো কিছু উদাহরণ দাও?
বুড়ো দা :- যেমন ধর, একজন রাজা প্রজাদের উপর অত্যাচার ক্রমশ বাড়িয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ, একটা ইনফাইনাইট series অফ অত্যাচার তৈরী হছে। এর ফলে কি হবে?
প্রজারা বিদ্রোহ করবে, আর রাজা সব ধন-প্রাণ সব হারাবে। অর্থাৎ, রাজার দিক দিয়ে দেখলে ultimate ফল নেগেটিভ। 
ভোম্বল :- অসাধারণ ............... ................... ফাটাফাটি। .....তুমি এলে তোমায় এবার রোল খাওয়াবো।  .
বুড়ো দা :-  ২০০৮-র American recession-র কথাই ধর না। কিছু লোকের লাগামছাড়া লোভ ওই রকম infinite series-র জন্ম দিয়েছিল; আর তার ফলে একসময় পুরো পৃথিবীর অর্থনীতি বসে গেল।  পৃথিবীর ইতিহাসের অনেক বিদ্রোহ, অনেক ঘটনা কিন্তু ওই ইনফাইনাইট series দিয়ে approximately ব্যাখ্যা করা যায়।
ভোম্বল :- কালকেই সবাইকে তোমার এই ব্যাখ্যার কথা বলব। ....................

এই........যাআআআআআআআআ ............ current off হয়ে গেল, সাথে সাথে computer-ও বন্ধ। ..............অগত্যা এখানেই থামতে হলো ভোম্বলকে। ................................... এই পুরো বিষয়টা নিয়ে ভাবতে ভাবতে রাতে শুতে গেল ভোম্বল।...

রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৩

Gene থেকে ছবি আঁকা যায়/ সেকি ভাবা যায়!

"একটু নড়লেই গুলি মাথা ফুঁড়ে বেরিয়ে যাবে", বলল গামছায় মুখ ঢাকা লোকটা। ভোম্বলের মাথায় ঠেকানো বন্দুকের নল। ভয়ে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম।
"কি চাই, ওকে ছেড়ে দাও ওর জ্বর হয়েছে", সামনে দাড়ানো ভোম্বলের মা  অসহায়ের মত বলে উঠল। 
"বাড়িতে সোনা-দানা, টাকা যা আছে দিয়ে দে, কোনো বেচাল দেখলেই গুলি চলবে",  বলল এক ডাকাত।
"বাড়িতে ১০ লক্ষ টাকা আছে আমরা জানি। সব চাই', বলে উঠল আর-এক ডাকাত।
দশমীর রাত। রাত ন'টা। পাড়ার সবাই ভাসানে গেছে।  বাড়িতে শুধু  মা আর ভোম্বল। এই ফাঁকে ছাদের দরজা ভেঙ্গে ঢুকে পড়ে চার ডাকাত। 

এর ১ মাস পরের এক পড়ন্ত বিকেল। মাঠে গোল হয়ে বসে রাজু, পটলা, গুগুল, হোদল, টিটু। ভোম্বল আজও আসেনি।
"ভোম্বলের সাথে কথা হলো?", জানতে চাইল পটলা।
"ও এখনও মোবাইল তুলছে না", বলল রাজু।
"মামা বাড়ি থেকে ফিরেছে?", জানতে চাইল টিটু।
"না-রে", বলল রাজু।
"বেচারা খুব ভয় পেয়ে রয়েছে", বলল হোদল।
"লাইফের প্রথম ডাকাতির অভিজ্ঞতা বলে কথা!", বলল গুগুল।
"ডাকাতদেরও বলিহারি, আর কাউকে পেল না, শেষে  কি না ভোম্বল!!", বলল হোদল।
"হ্যা, ডাকাতদের বলে দেব পরের বার তোদের বাড়িতে যেতে, তোর বাবা প্রচুর পয়সা করেছে", বলল পটলা।
"ইসস, একটা যদি ছবি পেতাম রে  ....... কপালে বন্দুক ঠেকানো ভোম্বল  .... ফেসবুকে আমার প্রোফাইল পিকচার করে দিতাম রে", হতাস মুখে বলল পটলা।
"ওই ছবি দেখে মেয়েদের লাইন পরে যেত ভোম্বলের জন্য", হাসতে হাসতে বলল গুগুল।
"আচ্ছা পুলিস কোনোও কিনারা করতে পারল?",  জানতে চাইল হোদল।
"না-রে",  বলল রাজু।
"তোদের পুলিস ডাকাত ধরেছে আর-কি! ঘুষ খাওয়ার থেকে অবসর পেলে তবে তো ধরবে!", বলল টিটু।
"শুরু হয়ে গেল, টিটু-বাবুর ভারতবর্ষ-নিপাত-যাক!", বলল পটলা।
"পুলিস ধরতে পারছে না কেন?",  জানতে চাইল রাজু।
"আমার মনে হয় আশেপাশের কোনো লোক ইনভলভ ছিল। তা না হলে, ডাকাতরা জানলো কি করে যে ওই দিন ভোম্বলদের ঘরে অত টাকা ছিল!", বলল গুগুল।
"ঠিক ঠিক", বলল পটলা।
"আসলে সব চেয়ে বড় সমস্যা হলো যে, চার ডাকাতের সবার মুখ গামছা দিয়ে ঢাকা ছিল। তাই ডাকাতদের কোনো ছবি আঁকা যায় নি ",  বলল রাজু।
"তাহলে?", বলল টিটু।
"একটা ক্লু আছে। এক ডাকাতের রক্ত। ছাদের দরজা ভাঙ্গার সময় এক ডাকাতের গা থেকে বেশ ক-এক ফোটা রক্ত মাটিতে পড়ে। ", বলল রাজু।
"তাহলে তো এক ডাকাতের Gene পাওয়া গেছে", বলল গুগুল।
"কিন্তু মুশকিল হলো যে ওই Gene পুলিসের ডাটাবেস-এ থাকা ডাকাতদের সাথে মেলে নি। সন্দেহজনক কিছু লোকের সাথেও মেলে নি। আর কেউ বাকি নেই মেলানোর মত।", বলল রাজু।
"তালে?",  জানতে চাইল হোদল।
"তালে আর কি! কিছু না, ফাইল বন্ধ", বলল পটলা।
"এখনকার ফরেনসিক সাইন্স-র সীমাব্ধতা হলো যে Gene থেকে অপরাধীর ছবি আঁকা যায় না। পুলিশ-কে এখনো প্রত্যক্ষদর্শী-র বর্ণনা অনুযায়ী ছবি আঁকাতে হয়। সেই ছবি দেখে অপরাধীকে চেনা অনেক ক্ষেত্রেই অসম্ভব হয়। ", বলল হোদল।
"হ্যা, পুলিসের চিত্রকরের আঁকা সেই সব অপরাধীর ছবির সাথে আমাদের অঙ্কের teacher শশীবাবুর খুব মিল পাই", বলল গুগুল। 
হো -হো করে হেসে উঠলো সবাই। 
"জানিস তো কিছু দিন আগে কাগজে পড়েছিলাম যে কিছু বিজ্ঞানী Gene থেকে মানুষের মুখের ছবি আঁকার চেষ্টা করছে", বলল হোদল।
"ব্যাপারটা  একটু খুলে বল তো", বলল পটলা।
"এই দেখ, আমরা কেমন দেখতে হব সেটা তো আমাদের জিন-র উপর নির্ভর করে। লম্বা হব না বেঁটে, গায়ের রং কি হবে, চোখের মণির  রং কি হবে, শরীরের গঠন কি হবে সব Gene-র উপর নির্ভর করে। মা-বাবার মুখের গঠনের সাথে ছেলে, মেয়ের  মুখের মিল থাকে। এখন আমরা যদি মানুষের মুখের গঠনের জন্য দায়ী Gene-র হদিস পাই তবে সেই Gene ব্যবহার করে মুখের ছবি আঁকা যে পারে।", বলল হোদল।
"তাই তো! মনে পড়ছে Tom Cruise-র সিনেমা-য় এরম ছিল। কিন্তু, বাস্তবে এও কি সম্ভব! ", বলল পটলা।
"কেউ কি এই কাজে সাফল্য পেয়েছে?", জানতে চাইল গুগুল।
"কিছুটা। নেদারল্যান্ড-এর Erasmus University Medical Center-র বিজ্ঞানী Dr. Manfred Kayser মানুষের মুখের গঠনের পিছনে দায়ী পাঁচ-টা Gene সনাক্ত করতে পেরেছেন। Dr. Manfred Kayser এবং ওনার সহযোগী বিজ্ঞানীরা প্রথমে MRI-র (Magnetic Resonance Imaging) মাধ্যমে ৫৩৮৮ জন European বংশোদ্ভুতোর মুখ scan করেন। ওনারা মূলত মুখের উপরের অংশের (নাক পর্যন্ত) scan  করেন। ওই scan থেকে, ওনারা মানুষের মুখের ৪৮ টা  চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করেন। তারপর,  ৫৩৮৮ জন Volunteer-এর Gene-র সাথে ওই  ৪৮ টা  চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যর সম্পর্ক খোজার চেষ্টা করেন। এই পদ্ধতিতে ওনারা ৫ টা Gene খুঁজে পান যা মানুষের মুখের উপরের অংশের গঠনের যাও দায়ী।", বলল হোদল।
"ওই Gene গুলো মুখের সব বৈশিষ্ট্যর জন্য দায়ী?", জানতে চাইল রাজু।
"না। এই ৫ টা Gene মুখের উপরের অংশের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য ঠিক করে। বিজ্ঞানীরা সন্দেহ করেন যে এছাড়াও আরো শত বা হাজার Gene রয়েছে যা মুখের ছোটো ছোটো বিশেষত্বর জন্য দায়ী। এজন্য Dr. Manfred Kayser এবং ওনার সহযোগী বিজ্ঞানীরা আরো গবেষণা চালাচ্ছেন।", বলল হোদল।
"আচ্ছা, ওনারা তো শুধু  European বংশোদ্ভুতোদের উপর পরীক্ষা করেছিলেন। হতে তো পারে যে , Asian-দের ক্ষেত্রে অন্য Gene দায়ী!", বলল  টিটু।
"এ বিষয়ে ওনারা আরো গবেষণা করছেন। তবে, আমরা সবাই তো মানুষ, তাই খুব কিছু আলাদা হওয়ার chance কম।", বলল হোদল।
"আচ্ছা, চুল বা চোখের মণির রঙের পিছনে কি এই ৫ টা Gene দায়ী?", বলল গুগুল।
"না, চুল বা চোখের মণির রঙের পিছনে অন্য Gene রয়েছে যার মধ্যে ১১ টি Dr. Kayser সনাক্ত করতে পেরেছেন। চুলের রঙের ক্ষেত্রে ওনারা ৮০ শতাংশের বেশী সাফল্য পেয়েছেন।", বলল হোদল।
"আর কতটা নিখুত মুখের ছবি আকতে পেরেছেন ওনারা ওই পাচটা Gene-র সাহায্যে?", জানতে চাইল পটলা।
" Dr. Kayser এখনো পুরো মুখের ছবি আঁকেননি কারণ মুখের নিচের অংশের Gene-র সনাক্তকরণ এখনো বাকি আছে। এই ৫ টা Gene মুখের উপরের অংশের বৈশিষ্ট্য ঠিক করে", বলল হোদল।
"জানিস তো, আর একজন রয়েছে যিনি জিন থেকে মানুষের মুখের ছবি একেছেন ", মোবাইলে Search করতে করতে বলল গুগুল।
"তাই! জানিনা তো! কে তিনি?", জানতে চাইল হোদল।
"আমেরিকার Rensselaer Polytechnic Institute-এ Heather Dewey-Hagborg নামক এক PhD স্টুডেন্ট এই বিষয়ে গবেষণা করছেন। ওনার পিএইচডি বিষয় হলো ইলেকট্রনিক আর্ট। উনি রাস্তায় পরে থাকা মানুষের চুল নিয়ে তার থেকে মানুষের মুখের ছবি আঁকার চেষ্টা করেন। প্রথমে, চুল থেকে এমন DNA বার করেন যা মানুষের চেহারার জন্য দায়ী হতে পারে। তারপর সেই Genetic information ব্যবহার করে উনি মুখের একটা 3-D আদল তৈরী করেন। এরপর 3-D প্রিন্টার ব্যবহার ওই মুখের একটা আসল প্রতিরূপ বা model বানান। Heather Dewey-Hagborg মানুষের চেহারার ৫০ টি বৈশিষ্ট চিহ্নিত করে সেগুলো পুর্ননির্মাণ করার চেষ্টা করছেন।",  বলল গুগুল।
"oh, তালে তো Heather Dewey-Hagborg Dr. Kayser-র থেকে অনেক বেশি সফল!", বলল হোদল।
"কিছুটা বলা যেতে পারে। তবে, Heather Dewey-Hagborg মুখের আকৃতির অনেক বৈশিষ্ট এখনো Gene থেকে বানাতে পারেনেনি।", বলল গুগুল।
"আচ্ছা, Heather Dewey-Hagborg-র বানানো মুখের কোনো ছবি internet-এ আছে? থাকলে দেখা না!", আগ্রহ নিয়ে বলল হোদল।
"হ্যা, Heather Dewey-Hagborg নিজের Gene থেকে নিজের একটা ছবি বানিয়েছেন, এই দেখ", বলে নিচের ছবি দেখালো  গুগুল।


                                 সোর্স: http://i.bnet.com/blogs/heather-dewey-hagborg-ted-scrn.jpg

"বানানো মডেল-টা  কিন্তু হুবহু ওনার মত দেখতে নয়", বলল রাজু।
"তা ঠিক। তবে বলা যেতে পারে ওনার বোন বা পরিবারের ওন্য কারোর মত', বললপটলা।
"হ্যা, আমারও তাই মনে হচ্ছে", বলল টিটু।
"এই ছবি দেখে বোঝা যাচ্ছে, আরো গবেষণা করলে কিন্তু Gene থেকে ছবি আঁকা সম্ভব হবে", বলল হোদল।
"এই দাড়া, ভোম্বল-কে  একটা SMS পাঠিয়ে বলি যে ওদের ডাকাত ধরা পড়বে খুব তাড়াতাড়ি  .. ২০-৩০ বছর পর.. হয়তো!", বলল পটলা। 

সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৩

তেল নয়, জলে চলে গাড়ী / এ-কি বাড়াবাড়ি!

অষ্টমীর সকাল।
পাড়়ার পুজো মন্ডপে বসে গল্প করছে রাজু, ভোম্বল, গুগুল, হোদল, পটলা, টিটু। অঞ্জলি দেওয়া হয়ে গেছে ওদের।
"যাই বল ভাই, পুজোর এই কটা দিনের মজাই আলাদা" বলল হোদল
"যা বলেছিস, স্বাধীনতা কাকে বলে এই ক-দিনেই শুধু বোঝা যায়। টিউসান, মা-বাবা-র শাসন থেকে মুক্তি।" বলল ভোম্বল।
"যত খুশি রোল, মোগলাই, চিপস, কোল-ড্রিঙ্কস  খাও। .. কেউ কিছু বলার নেই। " বলল পটলা।
"এই যে 'স্বাধীনতা-জিন্দাবাদ'-রা, বলি আজকের প্লান কি?", বিরক্ত মুখে জানতে চাইল টিটু।
"প্লান? ....... ভাবিনি তো কিছু ", বলল রাজু।
"এখন তো আড্ডা। ... তারপর ..... দুপুরে পাড়়ায় খাওয়া-দাওয়া .........  আসছিস-তো?", জানতে চাইল গুগুল।
"হ্যা, আসব-না মানে! পাড়়ার সবাই মিলে বসে খাওয়ার মজাই আলাদা।", বলল পটলা।
"মেনু কি ?", জানতে চাইল হোদল।
"শুনলাম, ফ্রাইড রাইস, খিচুড়ী, বেগুনি , আলু ভাজা, পাপড়, প্লাস্টিক চাটনি, জিলিপি, রসগোল্লা", বলল গুগুল।
"থাম, থাম ... জিভে জল চলে এল যে!", বলল ভোম্বল।
"খিদে-টা কেমন বেড়ে গেল না। এই হোদল, খাস্তা কচুরি নিয়ে আয়।", বলল পটলা
"তোর বাবা-কে বল নিয়ে আসতে।", খেপে গিয়ে বলল হোদল।
"আমি আজ দুপুরে খেতে যাচ্ছি না।", হটাত বলে উঠলো ভোম্বল।
"কেন? কি হলো!", বাকিরা অবাক হয়ে জানতে চাইল।
"আমি কোনো বার বেগুনি পাই না। প্রতিবার গুগুল আমার পাশে বসে আর আমার বেগুনি-গুলো খেয়ে নেয়। এই বছর নিলে, হ্যাট-ট্রিক হবে। ",  কাচুমাচু মুখ করে বলল ভোম্বল।
"আরে। .. তালে তো এবার তোর পাপড় আর জিলিপি খেয়ে আমরা হ্যাট-ট্রিক সেলিব্রেট করব। ..... মোটু..... তোর পাশে না বসলে আমার পেট ভরবে না!", বলল গুগুল
"আচ্ছা, দুপুর তো হল, বিকেল আর রাত-এ কি করা যায়?", জানতে চাইল টিটু।
"কলকাতা-য় ঠাকুর দেখতে  যাবি?  আমরা কোনো দিন বন্ধুরা মিলে যাই নি।", বলল গুগুল।
সবাই চুপ।
"দারুন আইডিয়া! "
"চ, সাউথ-টা ঘুরে আসি। "
"কিন্তু যাবি কি ভাবে?"
"হোদলদের গাড়ি তো রয়েছে "
"চাপ আছে! বাবা গাড়ি ব্যবহার করা কমিয়ে দিয়েছে। আমাকে দেবে বলে মনে হয় না। "
"কেন?"
"আরে, পেট্রলের দাম বেড়ে গেছে না।  .... "
"তালে বাস-এ করে চল।"
"তাতেও চাপ আছে  ....  পেট্রলের দাম না বাড়াতে রাস্তায় বাস খুব কমে গেছে .... আর তাই বাসে প্রচন্ড ভিড় হচ্ছে। ... মারামারি করে ঠাকুর দেখায় কোনো অনন্দ নেই।"
"হোদল, এক বার তোর বাবাকে বলেই দেখ না। "
"ok boss", বলল হোদল।

"বাবা না বলল", বলল হোদল।

"তালে ? যাওয়া হবে না!"
"এই শালা পেট্রল-ই সব কিছুর মূলে!"
"পেট্রলের দাম খুব বাড়ছে এটাও ঠিক।"
"বিদেশে তো এখন ইলেকট্রিক-এ চলে এমন গাড়ি আবিষ্কার হয়েছে।"
"সে তো আরো বিপদ। এমনিতেই কারেন্ট থাকে না, এর উপর গাড়ি কারেন্ট-এ চললে আরো লোডশেডিং হবে। তাছাড়া, তখন বিদ্যুতের দাম বাড়বে, ব্যাপারটা সেই হরে-দরে এক-ই।"
"তালে , এখন কি করা যায়?"
"এই রাজু তুই স্পন্সর কর। বেশী  না, ১০ লিটার তেল কিনে দে।"
"১০ লিটার জলের জার কিনে দিচ্ছি, চলবে!"
"Bingo!  ভেবে দেখ গাড়ি যদি জলে চলত তালে কেমন হত!", বলে উঠলো ভোম্বল।
"ব্যাপক হত, জলের যোগান তো অফুরন্ত।তাছাড়া পরিবেশ দূষণ-এর ভয়-ও নেই।", বলল রাজু।
"এই গুগুল দেখ না, এরম কিছু হয় কিনা?", বলল পটলা।
"এক মিনিট!", বলল গুগুল।
"সত্যি boss ..... এরকম গাড়ি বানানোর চেষ্টা বহু দিন ধরে চলছে। ৯০-র দশকে স্ট্যানলি মেয়ার নামক এক মার্কিন বিজ্ঞানী জল দিয়ে গাড়ি চালানোর সাফল্য দাবি করেন।", বলল গুগুল।
"উনি জল-কে কি ভাবে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করেন? এর অপারেটিং প্রিন্সিপল-টা কি? ", বলল পটলা।
"জল হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন দিয়ে তৈরি। হাইড্রোজেন একটা অত্যন্ত দাহ্য পদার্থ, যা অক্সিজেন-র সংস্পর্শে এলে জ্বলে ওঠে এবং শক্তি বার করে। স্ট্যানলি মেয়ার এমন একটা Fuel Cell বানান  যেটা প্রথমে জল-কে ভেঙ্গে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন  তৈরী করে এবং তারপর হাইড্রোজেন-কে পুড়িয়ে শক্তি উত্পন্ন করে সেটা দিয়ে গাড়ি চালান।",  বলল গুগুল।
"কিন্তু জল ভেঙ্গে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন তৈরি তো নতুন কিছু নয়। একেই তো electrolysis বলে। ",  বলল টিটু।
"একদম ঠিক। Normally, জল ভেঙ্গে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন তৈরি করতে অনেক বেশী শক্তি লাগে। কিন্তু, স্ট্যানলি মেয়ার দাবি করেন যে ওনার আবিষ্কৃত পদ্ধতিতে অনেক কম শক্তি ব্যবহার করে জলে থেকে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন তৈরি করা যায়। তারপর সেই  হাইড্রোজেন-কে বার্ন করে অনেক বেশি শক্তি  পাওয়া যায়। ওনার আবিষ্কারের মূল negative সাইড ছিল যে সেটা প্রচলিত Law of Thermmodynamics-র বিরোধী ছিল।", বলল গুগুল।
"তারপর কি হল?", জানতে চাইল রাজু।
"উনি ওনার আবিষ্কারের অনেক পেটেন্ট-ও নেন। অনেক তেল কোম্পানি ওনার থেকে পেটেন্ট কিনে নিতে চায়, কিন্তু উনি রাজি হননি। ওনার সন্দেহ ছিল যে তেল কোম্পানি ওনার পেটেন্ট কিনে ওনার আবিষ্কার চেপে দেবে। ওনার সন্দেহ খুব ভুল ছিল না। ১৯৯৬ সালে এক Ohio Court স্ট্যানলি মেয়ার-র আবিষ্কারকে জালিয়াতি বলে ঘোষণা করে। এরপর ১৯৯৮ সালে দুই বেলজিয়ান investor-এর সাথে resturant -এ খাওয়ার সময় হটাত করে উনি মারা যান। সম্ভবত ওনাকে বিষ দিয়ে মেরে ফেলা হয়। মনে করা হয়, তেল কোম্পানিগুলো এর পিছনে ছিল।", বলল গুগুল।

                                                            (Youtube থেকে নেওয়া)


"স্ট্যানলি মেয়ার-এর মৃত্যুর পর এই আবিষ্কার-র উপর পর্দা পরে যায়।  কিন্তু, গ্লোবাল ওয়ার্মিং-র জন্য আবার এই বিষয় নিয়ে আগ্রহ তৈরী হয়েছে।", বলল গুগুল।
"Recently, কারা কারা এটা নিয়ে কাজ করছে?", বলল হোদল।
"Genepax নামের এক জাপানি কোম্পানি এমন একটা গাড়ি আবিষ্কারের দাবি করেছে যেটা জলে চলে। এদের গাড়ি ১ লিটার জলে ৫০ মাইল যায়। এছাড়া আরো অনেকে এই রকম গাড়ি আবিষ্কারের কথা দাবি করেছে। এছাড়া ২০০৭ সালে, জন কান্জিউস একটা উল্লেখযোগ্য  দাবি করেন। উনি লবনাক্ত জলে আগুন জ্বালানোর সাফল্য দাবি জানান। ", বলল গুগুল।

                                                                (Youtube থেকে নেওয়া)


"তালে, জল দিয়ে গাড়ি চলার ভবিষ্যত কি? এটা কি সম্ভভ?", , বলল পটলা।
"এট়া একটা বড় প্রশ্ন। একটা লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো যে, কোনো University-র গবেষকরা এই রকম গাড়ির আবিষ্কার-এর দাবি করেননি। জল দিয়ে গাড়ি চলার theory এখনো কোনো University-র গবেষক প্রমান করতে পারেনি। ২০০৭ সালে Nature পত্রিকার এক কলাম-এ Philip Ball লেখেন যে জল দিয়ে গাড়ি চালানো অসম্ভব কারণ জল হল spent fuel যা hydrogen পুড়িয়ে পাওয়া যায়। জল জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে গেলে The first and second laws of thermodynamics-কে violate করতে হবে। ", বলল গুগুল।
"সব শুনে মনে হচ্ছে  জল দিয়ে গাড়ি চালানো এখনকার physics-এ অসম্ভব।", বলল হোদল।
"হ্যা, শুনতে ভালো লাগলেও জল দিয়ে গাড়ি চালানো কল্পনাই!", বলল পটলা।
"এতক্ষণ ধরে বকবক করে শেষে এই conclusion! তোরা পারিস-ও বটে!", বলল টিটু।
"এবার আসল কথায় আয়। কলকাতায় ঠাকুর দেখতে যাওয়া হচ্ছে?" বলল পটলা।
"আমার মাথায় একটা alternate প্লান এসেছে", বলল ভোম্বল। 
"কি?", চেচিয়ে উঠলো সবাই।

মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট, ২০১৩

গাছ দেয় আলো / এতো বেশ ভালো!

'হ্যালো, রাজু'
'কে-এএএএএ ...................গুগুল................ বল ..........আর সময় পেলি না। ........ সবে ঘুম-টা এসেছিল।'
'শালা, দুপুর বেলা পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছিস!'
'কাজের কথা বল ভাই'
'আজ খেলা হবে না।'
'সেকি!!!!! ..... কেন ???', আতকে উঠল রাজু।
'এই দেখলাম যে, মাঠের ধারের গাছ গুলো কাটছে।'
'তো ?'
'আরে, আমরা যেখানটায় খেলি, গাছগুলো সেখানেই ফেলেছে যে।'
'যা-আআ ....তালে তো খেলা যাবে না। অল্টারনেট প্লান কি? আমি মোট কথা, বিকেলে ঘরে বসে থাকতে পারছি না। তুই অন্যদের ফোন করেছিস ?'
'হ্যা, সবাই মিলে ঠিক হয়েছে আজ মাঠে আড্ডা আর পার্টি হবে। ভালো কথা, তুই এক কৌটো চানাচুর নিয়ে আনিস। আমি আলুকাবলি, পটলা পাপড়ি-চাট, টিটু চকলেট, ভোম্বল চিটবাদাম আনবে '
'ওহো! এত গ্র্যান্ড পার্টি। ok boss, সময় মত পৌছে যাব।  এখন একটু শুই, বাই '।

বিকেল পাচটা বাজে, মাঠে গোল করে বসে ভোম্বল, পটলা, গুগুল, হোদল, টিটু। সামনে নানা রকমের খাবার।
 'আমার জন্য কিছু আছে তো?' ছুটতে ছুটতে এলো রাজু, 'ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেল রে!'
 'আমরা তো চানাচুরের জন্য কখন থেকে wait করে আছি। শিগগির বার কর।' বলল ভোম্বল।
একমুঠো চানাচুর মুখে পুরেই হোদল বলে উঠলো, 'ভ্যাগ্গিস গাছ কাটা হচ্ছিল'।
 'আচ্ছা গাছ গুলো কাটছে কেন?', জানতে চাইল  পটলা।
 'কি জানি, শুনেছি গাছগুলো ল্যাম্পপোস্টের আলো ব্লক করে দিচ্ছিলো। এই জায়গাটা রাতের বেলায় অন্ধকার থাকত, দেখিসনি?' বলল গুগুল।
 'আরে, স্রেফ গাছ কেটে টাকা ইনকাম করবে। তা ছাড়া আর কিছু না', বলল টিটু।
 'ওই গাছ গুলোর মধ্যে একটা সবেদা গাছ ছিল রে। ফ্রি-তে সবেদা খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। ' কাচুমাচু মুখ করে বলল ভোম্বল।
 'গাছগুলো থাকলে গরমের দিনে একটু ছায়া পাওয়া যেত রে।' বলল হোদল।
  'তাছাড়া গ্লোবাল ওয়ার্মিং-র যুগে গাছ কাটা মানে নিজেদের ধ্বংস-কে নিমন্ত্রণ জানানো।' বলল রাজু
  'তা ঠিক, কেদার-বদ্রী-তে কি হলো আমরা দেখলাম তো!' বল পটলা।
  'আসলে আমাদের জীবন সবকিছু বড় অর্থনীতি নির্ভর। অথনীতিতে কেটে-ফেলা গাছের দাম আছে ,জ্যান্ত গাছের নেই।'
   'অশ্বথ্ব গাছের ছায়া-য় বসে গল্প করার দাম তোর-আমার কাছে আছে, অথনীতির নেই। ', উদাস গলায় বলল হোদল।
   'এই সমস্যা-র একটা সমাধান আমি জানি', পিছন থেকে কে যেন বলে উঠল!
সবাই এক সাথে পিছনে তাকাল।
   'আরে, বুড়ো-দা যে!' বলল ভোম্বল। বুড়ো-দা ভোম্বলের জ্যাঠতুতো দাদা যে USA-তে PhD করে।
ভোম্বলের বাড়িতে নেমত্তন্ন খেতে গিয়ে সবার সাথে বুড়ো-দার আলাপ হয়ে গেছে।
   'আরে, বস বস। ', বলল গুগুল।
   'বাড়িতে বসে bore হচ্ছিলাম। ভাবলাম মাঠ থেকে একটু ঘুরে আসি। ......................   তোদের আলোচনা শুনছিলাম। বেশ ইন্টারেষ্টিং', বলে বসল বুড়ো-দা।
   'তুমি কি একটা সমাধানের কথা বলছিলে না?', বলল ভোম্বল।
   'ধর, গাছগুলো যদি রাতে আলো দেয়, মানে রাতে ল্যাম্পপোস্টের টিউব-লাইটের মত জ্বলে ওঠে, তালে কেমন হয়?', বলল বুড়ো-দা।
   'গাছ রাতে আলো দেবে!', হা  করে বলল হোদল।
   'এও-কি সম্ভব!', বলল টিটু।
   'এটা হলে তো রাস্তার গাছ কাটার দরকার-ই পরবে না।', বলল টিটু।
   'তা-ছাড়া  টিউব-লাইটের দরকার-ও কমে যাবে। বিদ্যুতের প্রয়োজন কমবে, পরিবেশদূষণ কমবে।', বলল পটলা।
   'এতো ম্যাজিক!', বলল  ভোম্বল।
   'আমাদের এই পৃথিবীতে কিন্তু অনেক জীব আছে যাদের শরীর থেকে আলো বেরোয়। এই ঘটনাকে বলে Bioluminescence। কোনো উদাহরণ দিতে পারবি?', বলল  বুড়ো-দা।
   'জোনাকি', বলে উঠল ভোম্বল।
   'কারেক্ট, এছাড়া কিছু প্রজাতির জেলি-ফিস, লন্ঠন-মাছ (Lantern fish), এক প্রজাতির কোরাল, কিছু ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক এর উদাহরণ।,' বলে চলল বুড়ো-দা, 'এই সব জীবের শরীরে এক রকমের উতসেচক (enzyme) তৈরী হয়, যাকে Luciferase বলে। উতসেচক Luciferase, Luciferin  নামক রসায়নের সংস্পর্শে  এলে  আলো উত্পন্ন হয়। এক্ষেত্রে, Luciferin জ্বালানীর কাজ করে। আজ, বিজ্ঞানীরা সেই সব জিন (gene) চিহ্নিত করতে পেরেছেন যা জোনাকি, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি জীবের শরীরে Luciferase তৈরী করে।  ............ এখন যদি এই রকম আলো প্রদানকারী Luciferase Gene গাছের শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া যায় তালে তো গাছের থেকেও আলো বেরোতে পারে! .......... তাই নয় কি!'
   'দারুন  ব্যাপার।', বলল টিটু।
    'এত গল্প হলেও সত্যি!', বলল পটলা।
   'আচ্ছা, এই রকম গাছ কি সত্যি কেউ বানাতে পেরেছে?', জানতে চাইল গুগুল।
   'হ্যা নিশ্চয়ই। ১৯৮৬ সাল নাগাদ ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফর্নিয়া, সান দিয়েগো-র বিজ্ঞানীরা এই রকম একটা গাছ বানাতে সাফল্য লাভ করেন। ওনারা প্রথমে তামাক-গাছের মধ্যে জোনাকির Luciferase জিন ঢুকিয়ে একটা জেনেটিকালি-পরিবর্তিত তামাক গাছ বানান। তারপর, এই জেনেটিকালি-পরিবর্তিত তামাক গাছ-কে Luciferin-এর সংস্পর্শে রাখেন। ওনারা লক্ষ্য করেন যে ওই তামাক-গাছের গা থেকে আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে। Kodak ফ্লিম-এ ছবিও তুলে রাখেন।'
    'সেই ছবি ইন্টারনেট-এ আছে?', জানতে চাইল গুগুল।
    'হ্যা, খুঁজলেই পাবি।', বলল বুড়ো-দা।
     গুগুল ওর মোবাইল-এ সার্চ করে নিচের ছবিটা পেল।  আর সবাইকে দেখাল।



                                          সোর্স : http://static.tumblr.com/fsjpj7f/HIQmbec94/glowing_plant_-_square.jpg


     'আচ্ছা, এই আলোর উজ্জলতা কেমন ছিল?', জানতে চাইল পটলা।
     '১৯৮৬ সালের ওই গাছের কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। প্রথমত, আলোর উজ্জলতা বেশী ছিল না। তাছাড়া, বাইরে থেকে Luciferin দিলে তবেই গাছ আলো দিত। গাছ-টা automatic আলো দিতে পারত না।', বলল বুড়ো-দা।
     'তালে?', প্রবল কৌতুহল নিয়ে জিগ্গেস করল ভোম্বল।
     '২০১০ সালে, স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ইয়র্ক -র গবেষকরা দাবি করেন যে তারা এমন গাছ বানিয়েছেন যা automatic আলো দেয়। বাইরে থেকে Luciferin দেওয়ার দরকার নেই।  Luciferase, Luciferin দুটোই সেই গাছের মধ্যে তৈরী হয়। ওনারা ৬-টা মেরিন-ব্যাকটেরিয়ার জিন গাছের মধ্যে ঢুকিয়ে দেন। এই ৬-টা জিন আলোর জন্য দরকারী সব রকম রাসায়নিক গাছের ভেতর  তৈরী করে। ', বলল বুড়ো-দা।
    'আলোর রং কি? সেটা কি নিয়ন্ত্রণ করা যায়?', জানতে চাইল হোদল।
   'আলোর রং নির্ভর করে কি রকম Luciferase ব্যবহার হচ্ছে তার উপর। ওনারা চেষ্টা করছেন যাতে আলোর উজ্জলতা আরো বাড়ানো যায়।', বলল বুড়ো-দা।
   'এতো যুগান্তকারী আবিষ্কার। এই গাছ কি কিনতে পাওয়া যায়?', জানতে চাইল রাজু।
   'হ্যা, সাম্প্রতিক-কালে একটা সংস্থা এরকম গাছ বিক্রী করার কথা ঘোষণা করেছে। এনারা bioluminescence gene ফুলের কোষের নিউক্লিআস-এ ঢুকিয়ে দিয়েছেন যাতে বীজের মধ্যে ওই জিন চলে যায়।  ওনারা ওই বীজ বিক্রী করছেন।', বলল বুড়ো-দা।
  'কত দাম?', জানতে চাইল টিটু।
  '৪০ ডলার-এ এক গুচ্ছ বীজ দেবে ', বলল বুড়ো-দা।
  'আচ্ছা বুড়ো-দা, এর ফলে ভবিষ্যতে এমন লাল গোলাপ পাওয়া যাবে যেটা রাতে জ্বলে!', ভাবুক চোখে বলল ভোম্বল।
   সবাই একসাথে অবাক হয়ে ভোম্বলের দিকে তাকাল। 'কি ব্যাপার ভোম্বল-বাবু, হটাত লাল গোলাপের খোঁজ!'

শনিবার, ২৯ জুন, ২০১৩

বুদ্ধিমান দাঁত

     আকাশে এখনো সূর্য রয়েছে।সন্ধ্যা হতে ঢের দেরী। তবু আজ ওদের খেলা তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল। সব মিলিয়ে এক ঘন্টাও খেললনা ওরা।
     'কি-রে আজ পটলা, রাজু, হোদল-র খবর কি? খেলতে এলনা কেন? ওদের ছাড়া আজ খেলাটা জমল না।', খেলা শেষে মাঠে বসে  বলল টিটু।
     'কি জানি? সূর্য আজ পশ্চিম দিক দিয়ে উঠেছে মনে হয়। রাজু খেলতে এলনা, ভাবা যায়!', বলল টিটু।
     'কাল তো বলাই-দার টিউসান-এ ওরা তিন জন-ই এসেছিল', বলল ভোম্বল।
     'এই তো সবে মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হল, এর-ই মধ্যে টিউসান! পারিস-ও বটে তোরা। তা, বলাই-দা মানে যিনি অঙ্ক করান তো। শুনেছি, ওনার ছাত্ররা জল খেতে চাইলে উনি ওনার মেয়ে-কে বলেন আধ গ্লাস জল এনে দিতে!', বলল গুগুল।
     'আধ গ্লাস', হো হো করে হেসে উঠলো ওরা।
     'লোক-টা রাম কিপ্টে', বলল  ভোম্বল, 'খাতা কারেক্ট করার সময়ও  স্টুডেন্টদের পেন ব্যবহার করে। নিজের পেনের কালি পর্যন্ত খরচ করতে চায় না।'
     'আচ্ছা ওদের মোবাইল-এ কল করেছিলি? আমি করেছিলাম, কিন্তু কেউ ধরল না।', টিটু বলল।
     'দাড়া আমি এখন আর-একবার করে দেখছি,' বলে হোদল-কে ফোন করল গুগুল।
      'কি-রে আজ এলিনা কেন? .........সেকি! কি করে?..........আমাদের-কে বাদ দিয়ে দিলি!.......... বেশ হয়েছে ..........কবে আসবি আবার ............ ওকে, বাই .....', ফোনে এই কথা গুলো বলল গুগুল।
     'কি হয়েছে?', গুগুল ফোন রাখতেই জানতে চাইল টিটু।
     'শালাগুলো কাল টিউসানির পর খেতে গেছিল। হোদলের থেকে জোর করে কোল্ড-ড্রিঙ্কস আর প্যাটিস আদায় করেছিল', বলল গুগুল।
     'আমাকে ডাকল না তো', মুখ কালো করে বলল ভোম্বল।
     'তুই কাদিস পরে, আগে আমাকে কথাটা শেষ করতে দে', বলল গুগুল, 'প্যাটিস-গুলো বোধহয় ভালো ছিল না। ওই তিন-জনের-ই food poisoning হয়ে গেছে।'
     'বেশ হয়েছে, আমাদের না দিয়ে খেলে এটাই হবে', বলল হোদল, 'তা ওরা আবার কবে খেলতে আসবে?'
     'বমি-টা বন্ধ হয়েছে। তবে লুস-মোশন চলছে। 'লুস' টাইট হলে তবেই ওরা আসবে। আরো এক-দুই দিন লাগবে বোধ হয়', বলল গুগুল।
     'আমাদের বাড়িতে কাল এই নিয়ে আলোচলা হচ্ছিল। আমাদের এক আত্মীয়ও food poisoning-র জন্য হাসপাতালে ভর্তি', বলল ভোম্বল। 
     'আমাদের দেশ-এ ফুড ইন্সপেক্টর-রা এত ফাকিবাজ আর ঘুষখোর হয়। কেউ নিজের কাজ ঠিক করে করে না', বলল টিটু।
     'ফুড ইনস্পেকশন কিন্তু সব সময় কাজ করে না। মনে নেই, ২০১১-তে জার্মানি-তে কত লোক E-Coli ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে মারা গেছিল। শাকসব্জির মধ্যে দিয়ে এই ব্যাকটেরিয়া মানুষের শরীরে প্রবেশ করেছিল। ওদের দেশ-এ কিন্তু ফুড inspection বেশ ভালো ভাবে হয়। তবু-ও  ওরা এটা আটকাতে পারেনি', বলল গুগুল।
     'কাল, আলোচলার সময় বুড়ো-দা একটা নতুন আবিষ্কারের কথা বলল যা food  poisoning আটকাতে সাহায্য করতে পারে', বলল ভোম্বল।
    ' বুড়ো-দা মানে তোর জ্যাঠতুতো দাদা তো, যে USA-তে PhD করে। সে এখন এখানে?', জানতে চাইল গুগুল।
    'হ্যা, পরশু দিন বুড়ো-দা এসেছে,' বলল ভোম্বল।
    'তা একদিন আমাদের সাথে আলাপ করিয়ে দে', বলল টিটু।
    'হ্যা, মা বলছিল তোদের একদিন নেমত্তন্ন করবে,' বলল ভোম্বল।
    'দারুন ব্যাপার তো। এবার বল, তোর বুড়ো-দা কি বলল?', বলল টিটু।
    'বুড়ো-দা বলল যে USA-র Princton এবং Tufts ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এক রকম বুদ্ধিমান দাঁত আবিষ্কার করেছেন, যেটা বলে দেবে যে মুখের মধ্যের খাবার-এ কোনো হানিকারক ব্যাকটেরিয়া আছে কিনা?', বলে থামল ভোম্বল। দেখল সবাই হাঁ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
   'বুদ্ধিমান দাঁত! একমিনিট সময় দে ব্যাপারটা একটু হজম করে নি', বলল টিটু।
   'আর একটু খুলে বল, এটা কি ভাবে কাজ করে? এটা কি কোন কৃত্রিম দাঁত?', জানতে চাইল গুগুল।
   'না, কৃত্রিম নয়। আসল দাঁত। গ্রাফেন - নামের একটি  পদার্থ দিয়ে ওনারা দাঁত-র উপর একটা ট্যাটু বানান। সেই ট্যাটু মুখের মুধ্যে কোনো ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি ধরতে পারে', বলল ভোম্বল।


                                                                             সোর্স :  http://assets.nydailynews.com/polopoly_fs/1.1079703!/img/httpImage/image.jpg_gen/derivatives/landscape_635/image.jpg

   'গ্রাফেন কি?', জানতে চাইল টিটু।
  'সহজ ভাবে বললে এটা one-atom thick  layer of Graphite', বলল ভোম্বল
  'one atom thick বানায় কি ভাবে? এতো কল্পনা করাই মুশকিল!' বলল টিটু।
  'nanotechnology-তে এরকম নাকি বানানো যায় এখন', বলল ভোম্বল।
  'আচ্ছা, ওই ট্যাটু কোন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির কথা মানুষ-দের জানায় কি ভাবে? ওই ট্যাটুর মধ্যের খবর জানার জন্য কি কোনো wire ওই  ট্যাটুর সাথে লাগাতে হবে?', জানতে চাইল গুগুল।
 'না না, ওই ট্যাটু-র মধ্যে ছোট একটা antenna আছে।  antenna-টা গ্রাফেনের সাথে যুক্ত থাকে। কিন্তু ওই ট্যাটু-র মধ্যেকোন battery নেই। একটা receiver যন্ত্র  wireless communication-র মাধ্যমে ওই ট্যাটু-র সাথে যোগাযোগ করে এবং ওই ট্যাটু-র  মধ্যে জমা তথ্য সংগ্রহ করে।  রোগীর মুখে কোন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এলে ওই receiver যন্ত্রে সেটা ফুটে ওঠে। কোন wire ব্যবহার  না ব্যবহার করেই ডাক্তার বা রোগী নিজে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির কথা জানতে পারে। এর ফলে, ডাক্তার-রা কোন অসুখ শুরুতেই ধরতে বা চিকিত্সা করতে পারবে আর রোগীরাও অসুখ সম্পর্কে সাবধান হয়ে যাবে। ', বলল ভোম্বল।
    'ওনারা এটা কি মানুষের উপর পরীক্ষা করেছেন?' বলল গুগুল।
    'ওনারা এই ট্যাটু গরুর দাঁতে লাগিয়ে তার উপর মানুষের মুখের ভেতরের হওয়া ছেড়ে দেখেছেন যে ওই ট্যাটু ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি ধরতে পেরেছে। গরুর দাঁত ব্যবহার করেছেন কারণ মানুষের দাঁতের পক্ষে ওই ট্যাটু একটু বড়। তবে ওনারা এরপর মানুষের দাঁতের মত করে ওই  ট্যাটু বানাবেন', বলল ভোম্বল।
     'ওই ট্যাটু কোন কোন ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি ধরতে পারে?', জানতে চাইল টিটু।
    'গবেষকরা এখনো পর্যন্ত  কিছু stomach ulcers and some cancer-র সাথে যুক্ত ব্যাকটেরিয়া সনাক্ত করতে পেরেছেন। যদিও আরো গবেষণার দরকার আছে', বলল ভোম্বল।
    'আচ্ছা, খাবার খেলে বা ব্রাশ-করলে ওই ট্যাটু-টা উঠে আসবে না তো?', জানতে চাইল গুগুল।
    'হ্যা, এটা খুব দরকারী বিষয়। এই মুহুর্তে, ওই ট্যাটু খুব স্থায়ী নয়। তবে গবেষকরা এটাকে আরো স্থায়ী করার চেষ্টা করছেন যাতে দাঁত মাজলে বা খাবার খেলে এটা দাঁত ছেড়ে বেরিয়ে না আসে', বলল ভোম্বল।
    'বুদ্ধিমান দাঁত-ই বটে! হাই-ফাই আবিষ্কার কিন্তু!', বলল গুগুল। সবাই মাথা নেড়ে তাতে সায় দিল।
     'ও! একটা হেব্বি রসালো খবর আছে। আমি ভুলেই গেছিলাম বলতে', বলে উঠল গুগুল।
     বিকেল প্রায় শেষ হতে চলল। ওরা এবার অন্য বিষয়ে আলোচলা করতে সুরু করল। তবে আমাদের তাতে আগ্রহ নেই, কি বল তোমরা?

সোমবার, ২৪ জুন, ২০১৩

বিদ্যুত্ বিহীন রেফ্রিজারেটর

'বিদ্যুত্ বিহীন রেফ্রিজারেটর তাও কি হয়! এ যেন সোনার পাথর বাটি। '- বলে উঠল রাজু ।
    সুভাষ মাঠে গোল হয়ে বসে গল্প করছে একদল ছেলে। ওরা হল রাজু, পটলা, ভোম্বল, গুগুল, হোদল, টিটু।সবে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে উঠেছে ওরা। এখন কিছুদিন অখণ্ড বিশ্রাম। বিকেল বেলায় টিউশন-এ যাওয়ার যন্ত্রণা থেকে কিছু দিনের মুক্তি। বিকেল ৩-টে বাজতে না বাজতেই ফুটবল নিয়ে মাঠে নেমে পরে ওরা। ৩ ঘন্টা ধরে চলে অবিরাম বল পিটানো। তারপর যখন অন্ধকার হয়ে আসে তখন গোল হয়ে বসে এই আড্ডাটা না দিলে ওদের চলে না।
    আজ কথাটা শুরু হয়েছিল ঠান্ডা জল খাওয়া নিয়ে। গত কয়েক দিন ধরে ওদের এলাকায় এই সময়টায় নিয়ম করে লোডশেডিং  হচ্ছে। গরম কালে প্রায় ২-৩ ঘন্টা ধরে চলে এই লোডশেডিং। খেলা শেষে  মাঠে বসে-ই রাজু বলে উঠল 'দূর-দূর'।
   পটলা বললো, 'তোর আবার কি হল ? বেশ তো ভালই ছিলি।'
  'আরে  খুব জল তেষ্টা পেয়েছে, ঘরে গিয়ে যে একটু ফ্রিজের ঠান্ডা জল খাব, তার  জো নেই। কারেন্ট নেই।' রাজু বলল।
   'এ আর নতুন কি! এই হোদল, তোর  কোল-ড্রিঙ্কস খাওনোর কথা ছিল না। আজ খাওয়াবি', পটলা  বললো।
   'কেন বাবা, আমাকে ধরে আবার টানাটানি কেন?',হোদল আতকে উঠল, 'তাছাড়া দোকনের ফ্রিজ তো আর জেনারেটার-এ চলে না, সেখানেও তো সব কোল-ড্রিঙ্কস হট-ড্রিঙ্কস হয়ে গেছে।'
   পটলা মুষড়ে  পড়ে বলল, 'তা ঠিক।'
  'এই দেশের কিছু হবে না। দিন দিন এই দেশ-টা উচ্ছনে যাচ্ছে। কারেন্টের মত মৌলিক চাহিদাই মেটে না এখানে!', বিজ্ঞের মত বলে উঠল টিটু।
  'কারেন্ট সব জায়গায় যায়। মনে নেই আমেরিকায় ২০০৩-এ কি অবস্থা হয়েছিল! কয়েক দিন ধরে কারেন্ট ছিল না।', বলে চললো পটলা, 'ওদের দেশে তো রান্না-ও হয় কারেন্ট-এ। ভেবে দেখ, ২০-৩০ তলা বাড়ি , কারেন্ট নেই, খাবার নেই, লিফট নেই।'
  'তা ঠিক, আসল  কথা হলো কারেন্ট-র উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা', টিটু বললো।
  রাজু হতাশ কন্ঠে বলে উঠলো, 'আগেকার দিন হলে তাও ঘরে একটা কুজো থাকতো, ঠান্ডা জল পাওয়া যেত।'
    'আচ্ছা, বিদ্যুত বিহীন রেফ্রিজারেটর বলে কিছু হয় না।',বলল ভোম্বল। সবাই এক মুহূর্তের জন্য চুপ করে গেল। ভোম্বল, গোল-গাল বল-র মত দেখতে একটা ছেলে। অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বলা ওর পুরানো স্বভাব।
  'এ যেন সোনার পাথর বাটি ', বলল রাজু ।
  পটলা বলল, 'বাপের জন্মে এমন কিছু শুনিনি। বিদ্যুত বিহীন রেফ্রিজারেটর তাও কি হয়!'
  টিটু বলল, 'তুই কি এইরকম কিছু শুনেচিস না আন্দাজে ঢিল মারছিস?'
  ভোম্বল বলল, 'না শুনিনি, কিন্তু এমনতো হতেও পারে।'
  'জানিস তো, এরকম কিছু একটা গুগুল নিউজ -এ একবার দেখেছি মনে হচ্ছে', গুগুল বলল। গুগুল নামটা ওর বন্ধুদের দেওয়া ওর google -র প্রতি অন্ধ-বিশ্বাসের জন্য। ও বলে, 'গোগোল-র দিন gone, এখন google-র যুগ।' কথাটা অবশ্য ও ভুল বলে না। গুগুল  সারাক্ষণ মোবাইলে ইন্টারনেটে কিছু একটা করে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে সময় না কাটলে নিজের নাম-টাই  google-এ  সার্চ করে ও।
  রাজু বলল, 'দেখতো, তোর google -এ, এরম কিছু খুজে পাস কিনা? থাকলে আমাকে একটা গিফ্ট করিস তোরা।'
  একটু পরে, গোল গোল চোখে গুগুল বলে উঠল, 'হুত্কো ভোম্বল-টা  ঠিক-ই বলেছে-রে।'
  'যা দেখছিস চটপট বলে ফেল', রাজু বলল।
  গুগুল বলল, 'মনসুখভাই প্রজাপতি নাম-র গুজরাট-র একজন কুমোর এরকম একটা রেফ্রিজারেটর বানিয়েছেন  মাটি দিয়ে, যা চালাতে কারেন্ট লাগে না। ওনাদের http://www.mitticool.in/ বলে একটা ওয়েবসাইট-এ এর কথা বলা আছে। উনি এই আবিষ্কার-র জন্য অনেক পুরস্কার-ও পেয়েছেন। ETH  Zurich university-তে এর উপর একটা প্রেসেনটেসান-ও দেওয়া হয়েছে। এই দেখ, এখানে ওই বিদ্যুত্ বিহীন রেফ্রিজারেটরের একটা ছবি-ও আছে।'
  'কই, দেখি দেখি', সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ল গুগুল-র মোবাইলের উপর।
  'মাগো!', বলে চেচিয়ে উঠলো রাজু, 'এই শালা হোদল , তোর হাটু দিয়ে আমার হাত-র উপর ভর করে আছিস, বুঝতে পারছিস না!'
  'sorry ভাই', বলল হোদল, তারপর কথা ঘোরানোর জন্য বলল,  'এটা দেখতে কিন্তু অনেকটা দোকান-এ রাখা ছোটো কোল-ড্রিঙ্কসের ফ্রীজ-র মত।'  সবাই আবার ছবিটার দিকে নজর দিল। ( ছবিটা মিট্টিকুল-র ওয়েবসাইট-থেকে নেওয়া )

                                          সোর্স: https://indianbydesign.files.wordpress.com/2011/07/mitticool-refrigerator.gif

   'এতে সব কিছু রাখা যায়?', প্রশ্ন করল রাজু।
   গুগুল বলল,'এনারা দাবি করছেন যে এই ফ্রিজে ২০ লিটার পানীয় জল, ৫ কেজি ফল, শাক-সব্জি এবং ৫ লিটার দুধ  রাখা যাবে ২-৩ দিন অবধি।'
   'কাজ চালনোর মত যথেষ্ট', বলল রাজু, 'দেখত, এতে বরফ হয় কিনা? আর এর অপারেটিং প্রিন্সিপল-টাই বা কি?'
   'দেখছি', বলল গুগুল।
   'এটা বাষ্পায়ন বা evaporation প্রিন্সিপলের উপর দাড়িয়ে। এর উপরের অংশে একটা জল-র ট্যান্ক আছে যার থেকে জল চুইয়ে চুইয়ে দেওয়াল বেয়ে পড়ে আর পড়ার সময় বাষ্প হয়ে যায়। বাষ্প হওয়ার সময় জল ফ্রিজের  ভেতর থেকে উত্তাপ শুষে নেয়, ফলে ভেতরের উত্তাপ কমে যায়। তবে এতে বরফ হয় না।', বলল গুগুল।
  'অপারেটিং প্রিন্সিপল-টা নতুন কিছু নয়, কুজো-তেও একই প্রিন্সিপাল-এ জল ঠান্ডা হয়। আমরা বই-তে এই প্রিন্সিপল-টা পড়েছি  তো', টিটু বলল।
  'অপারেটিং প্রিন্সিপল-টা এক হলেও এই ফ্রিজের বিশেষত্ব হলো এর আকৃতি, মাটি এবং এর তাপ-সঞ্চালন ব্যবস্থা (thermodynamics) যেটা মনসুখভাই-র আবিষ্কার', বলে চলল গুগুল, 'এই ফ্রিজ কতটা ঠান্ডা করবে তা নির্ভর করে পরিবেশের উপর। গরমের জায়গায় এই ফ্রিজের কার্যকরিতা (কুলিং ইফেক্ট) বেশি।'
 'সেটা অবশ্য কোনো সমস্যা নয়, কারণ গরমে ফ্রিজের দরকার হয় বেশি', বলল পটলা, 'রাজস্থান, গুজরাট-র মত জায়গায় এটা খুব ভালো কাজ করবে। এতে পরিবেশ দুষণ নেই, রক্ষনাবেক্ষণ করার-ও দরকার নেই আর সস্তাও নিশ্চই।'
  'এর দাম কত?', জানতে চাইল রাজু।
  '৩১০০ টাকায় এটা ঘরে পৌছে যাবে', বলল গুগুল।
  'তালে তো কোনো চিন্তাই নেই, আসছে জন্মদিন-এ এটা তোরা আমায় গিফ্ট করছিস', বলল রাজু।
  'নিজের শ্বশুর-কে বলিস তোকে বিয়েতে দিতে, আবদার দেখো লোক-জনের। অবশ্য  তোর  শ্বশুর তোর জন্য এত্তো টাকা খরচ করবে বলে মনে হয় না', বলল পটলা।
    'আচ্ছা আগে মানুষ ফ্রিজের বদল-এ কি ব্যবহার করত? বিশেষ করে গরমের জায়গায়? কিছু একটা থাকবে, দেখত', হঠাত্  করে বলে উঠল ভোম্বল।
   সাথে সাথে টিটু  বলল, 'ঠিক বলেছিস, দেখত, আগে কি ব্যবস্থা  ছিল?'
   'ok, দেখা যাক ', বলল গুগুল।
    'কুজো বা ওই জাতীয় পাত্রর ব্যবহার অনেক দিন আগে থেকেই রয়েছে, সেই হরপ্পা, মহেঞ্জদড়-র সময় থেকে।  এছাড়া, আর এক রকমের পাত্র আছে যাতে একটা মাটির পাত্রের মধ্যে আরেকটা মাটির পাত্র ঢোকানো থাকে, আর দুই পাত্রের মধ্যে ভেজা বালি রাখা থাকে। সুদানে একে জির-পাত্র বলে। ভারতেও অবশ্য এরকম পাত্রের ব্যবহার আছে। তবে এগুলোকে ঠিক ফ্রিজ বলা যায় না আর এদের ঠান্ডা করার ক্ষমতাও সীমিত (নীচে এর ছবি দেওয়া হলো,অন্য ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া)।' বলল গুগুল।


                                                                    সোর্স : http://3.bp.blogspot.com/--gTX7gTe15Y/UE5LTmjvMAI/AAAAAAAALzg/c9LmuYZnDHI/s1600/394388_10151010896632382_1759355211_n.jpg

'আসলে বিদ্যুত্ আবিষ্কারের সাথে সাথে এই সব পুরোনো পদ্ধতিগুলো মানুষের জীবন থেকে প্রায় হারিয়ে গেছিল। আজ, গ্লোবাল ওয়ারমিং-র যুগে এই পুরানো পদ্ধতিগুলো আবার প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পাচ্ছে। তাছাড়া এগুলো সস্তা এবং গরিব মানুষের নাগালের মধ্যে। মনসুখভাই-র আবিষ্কার হল সেই পুরানো পদ্ধতির আধুনিক এবং আরো উন্নত রূপ', গম্ভীর গলায় বলে উঠল ভোম্বল।
 'এই রে অনেক দেরী হয়ে গেল', বলে উঠে পড়ল পটলা। এই সময় রোজ ও কোথায় যেন যায়। ও যে বাড়ি যায় না, এটা  সবাই জানে। অন্ধকার-ও হয়ে এসেছে। যাই হোক , আজকের মত আড্ডা শেষ করে সবাই যে যার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল।

রবিবার, ২৩ জুন, ২০১৩

সূচনা

মানব সভ্যতার ইতিহাস লক্ষ বছরের ইতিহাস। দেড় থেকে দুই লক্ষ বছর আগে আফ্রিকায় মানবের আবির্ভাব।সেই আদিম মানবের সাথে আর পাচটা জীবজন্তুর মিল ছিল বেশি, অমিল ছিল কম। আজকের উচু উচু বাড়ির এসি ঘরের মধ্যে কম্পিউটারে মুখ গুজে থাকা মানুষের সাথে সেই আদিম মানবের জীবনের আকাশ-পাতাল তফাত। এই তফাতের বেশির ভাগটাই অবশ্য এসেছে বিজ্ঞানের দৌলতে।বিজ্ঞানের এই অশ্বমেধ ঘোড়া আজও এগিয়ে চলেছে উদ্দাম গতিতে।

এই ব্লগের উদ্দেশ্য হল বিজ্ঞানের নতুন আবিষ্কারকে সহজ সরল ভাষায় উপস্থাপিত করা যা শুনে মনে হয়  - এমন যদি সত্যি হয় আহা!